রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ৩ বছর ২ মাস ৮ দিন পর ফের ফুলবদল অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh)। বারাকপুরের সাংসদের দলবদলের পরেরদিনই দিল্লি যাচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে অর্জুন সিংয়ের সাংসদপদ এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অর্জুনের দলবদলের পর বারাকপুরের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা হওয়ার সম্ভাবনা।
মাসকয়েক আগে বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) ও রবিবার অর্জুনের দল ছাড়া বঙ্গ বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা। লোকসভা ভোটের আগে আরও যে অনেকে দল ছাড়তে পারেন, তা এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তবে অর্জুনের দলত্যাগ নিয়ে দিলীপের ‘প্রশাসনিক চাপে’র ব্যাখ্যা যে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের দাবিকে সমর্থন করছে, তা মেনে নিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরাও। দলের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে এদিন দিলীপ বলেন, “আসলে অর্জুন চাপে পড়ে চলে গিয়েছেন। ওঁর একাধিক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর হয়তো আর লড়াই করা সম্ভব ছিল না। প্রশাসনিক চাপ সহ্য করতে পারছেন না তাই আত্মসমর্পণ করেছেন। চাপে পড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন, বাধ্য হয়ে গিয়েছেন।’’
অর্জুনের দলত্যাগের দায় নিয়ে রবিবার দুপুর থেকেই দলের অন্দরে নেতাদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। সুকান্ত-শুভেন্দু-অমিত মালব্যদের নেতৃত্বে যেভাবে তাসের ঘরের মতো রাজ্য বিজেপি ভাঙছে, তাতে গেরুয়া শিবিরের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটের আগে আরও অনেক হেভিওয়েট দল ছাড়বে। দলবদলুদের নিয়ে ভিড় বাড়ানো গেরুয়া শিবির কার্যত ফাঁকা হয়ে যাবে। চরম হতাশ বিজেপি কর্মীদের মধ্যে দলবদলু সন্দেহভাজন নেতাদের নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলায় সাধারণ মানুষের কাছে গেরুয়া পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছে। বর্তমান রাজ্যনেতাদের ‘অযোগ্যতা’র বিরুদ্ধে তোপ দেগে বাবুল সুপ্রিয়, জয়প্রকাশ মজুমদাররা দল ছেড়েছেন। রীতেশ, সায়ন্তন, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, সকলেই টিম সুকান্ত-অমিতাভ-শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
অর্জুন সিংও ‘ফেসবুকে থাকা, ঠান্ডা গাড়ি চড়া’ দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল ছাড়লেন। বারাকপুরের সাংসদের দল ছাড়ার পর বিজেপির মধ্যেই প্রশ্নের মুখে সুকান্ত ও শুভেন্দু। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বঙ্গ সফরে এসে পার্টিকে ঘুরে দাঁড় করাতে এই দু’জনের উপরই গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে গোপন বৈঠক করে অর্জুনকে কার্যত হাতে-পায়ে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু তারপরও অর্জুনের দলত্যাগ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৫ মে সমস্ত রাজ্যের দলের বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠক করবেন জে পি নাড্ডা। সুকান্ত-অমিতাভ-শুভেন্দুর নেতৃত্বে চলা বঙ্গ বিজেপিতে দল ক্রমশ ভাঙছে। জেলায় জেলায় বিদ্রোহ। এই পরিস্থিতিতে নাড্ডাকে ওইদিন কী রিপোর্ট দেবেন সুকান্ত-শুভেন্দুরা তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.