সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় সেনার অন্দরমহলে কান পাতলে আজও শোনা যায় শ্যাম বাহাদুরের নাম৷ দেশের প্রতিরক্ষায় অসমসাহসের পরিচয় রেখেছেন অনেকেই৷ কিন্তু বীরত্ব, হিউমার, সাহস সব মিলিয়ে শ্যাম যেন এক বর্ণময় কিংবদন্তি৷
ফিল্ড মার্শাল শ্যাম ম্যানেকশকে শ্যাম বাহাদুর বা শ্যাম ‘দ্য ব্রেভ’ নামেই চেনেন সকলে৷ একসময় ভেবেছিলেন ডাক্তার হিসেবে৷ কিন্তু মত পরিবর্তন করে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে৷ ভাগ্যিস করেছিলেন! নইলে এমন বর্ণময় চরিত্র পেত না ভারতীয় সেনাবাহিনী৷
কেমন এই শ্যাম বাহাদুরের কীর্তি? কয়েকটি নমুনাতেই স্পষ্ট হবে কেন তিনি দেশের ডেয়ারডেভিল আর্মি জেনারেলদের একজন৷ ১৯৭১-এ পাক সেনার অনুপ্রবেশ আটকানো সম্ভব হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বেই৷ এরকমই এক যুদ্ধক্ষেত্রে মারাত্মক জখম হয়েছেন শ্যাম৷ শরীরে বিঁধে আছে সাত সাতটা বুলেট৷ চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সময় জানতে চাইলেন, হয়েছে কী? শ্যাম বাহাদুরের নিরুত্তাপ জবাব, ‘ও কিছু নয়, একটা বাঁদরে লাথি মেরেছে এই যা৷’
এরকমই বাহাদুর ছিলেন শ্যাম৷ ঘোর বিপদেও কীভাবে যে তিনি তাঁর রসিকতাবোধ ধরে রাখতে পারতেন, তা তাঁর সতীর্থ তো বটেই, পরবর্তী প্রজন্মের সেনাদের কাছেও এক রহস্য৷ সেনার মধ্যে বিদ্রোহ বা ক্যু-এর গুজব শুনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ব্যাপারটা সত্যি কি না৷ শ্যামের সপ্রতিভ উত্তর ছিল, ‘আপনি আপনার ব্যাপার নিয়ে থাকুন, আমি আমার৷ আপনি আপনার কাছের মানুষকে চুমু খান, আমি আমার৷ আমি রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলাব না, যদি না কেউ আমার সেনার ভিতরে নাক গলায়৷’ এ কথাতেই যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, আর উচ্চবাচ্য করেননি৷ রাজনীতিবিদদের সম্বন্ধে তাঁর ধারণা কীরকম ছিল? শ্যামের মন্তব্য, ‘আমি ভাবি প্রতিরক্ষার দায়িত্বে যে রাজনীতিবিদরা থাকেন তাঁরা আদৌ মোটর আর মর্টার, গেরিলা আর গরিলার তফাৎ করতে পারেন কি না! তবে গরিলার সঙ্গে ওঁদের অনেকেরই মিল পাওয়া যায়৷’
শোনা যায়, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাঁর মোটরবাইকটি কিনেছিলেন৷ সেই আমলে তার দাম ছিল ১,০০০ টাকা৷ কিন্তু দাম আর দেওয়া হয়নি৷ পরে এ নিয়ে শ্যাম বাহাদুরের মন্তব্য ছিল, ইয়াহিয়া আমার বাইকের দাম দেয়নি, এখন দেশের অর্ধেক দিয়ে দাম মেটাচ্ছে৷ তরুণ সেনারাও এই জেনারেলকে প্রায় ভগবানের মতো ভক্তি করতেন৷ আর করবেন নাই বা কেন! একবার এক সেনা গুলির আঘাতে জখম৷ তাঁকে দেখতে গিয়ে শ্যাম বলেছিলেন, ‘এই বয়সে তুমি তিনটে গুলি খেয়েছ, আর এই বয়সে আমি পাঁচটা গুলি খেয়েছিলাম৷ আর দেখ, আজ আমি ভারতীয় সেনার কম্যান্ডার৷ আর এক সেনার মালপত্র বয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং জেনারেল৷’ সেই সেনা তো আপ্লুত৷ তিনি বললেন, ‘আমি সবসময় এই সাহায্য করে থাকি৷ অবসর সময়ে এঁদের নির্দেশও দিই৷’
এরকমই বর্ণময় চরিত্র তিনি৷ ফিল্ড মার্সাল হিসেবে তিনিই প্রথম ফাইভ স্টার পান ভারতীয় সেনায়৷ ২০০৮ সালে ৯৪ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়৷ কিন্তু আজও সেনা আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় শ্যাম বাহাদুরের গল্প৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.