বোফর্স কামান।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় রাজনীতির গতিপথ বদলে দেওয়া রাজীব আমলের বোফর্স কেলেঙ্কারির খাতা ফের খুলছে মোদি সরকার। ১৯৮৬ সালের সেই অস্ত্র চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য আমেরিকার কাছে চাইল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। লেটার অব রগেটরি বা এলআর পাঠানো হল আমেরিকাকে। ২০১৭ সালে ভারত সফরে এসে এই ইস্যুতে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন বেসরকারি তদন্তকারী মাইকেল হার্শম্যান। তার ভিত্তিতেই এবার অতীত খুঁড়তে নামল সিবিআই।
সময়টা ১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ। ভারতের সঙ্গে ১৪৩৭ কোটি টাকার চুক্তি হয় সুইডেনের অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার। সেই চুক্তি মোতাবেক চারশোটি ১৫৫ এমএম হাউইৎজার গান বা কামান কেনার পরের বছর ১৯৮৭ সালের ১৬ এপ্রিল সুইডেনের এক রেডিও চ্যানেল দাবি করে, এর জন্য ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের ‘কমিশন’ দিতে হয়েছে ওই সংস্থাকে। প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ ওঠে। ১৯৯০ সালের ২২ জানুয়ারি সিবিআই এফআইআর দায়ের করে বোফর্সের প্রেসিডেন্ট বোফর্স মার্টিন আরবডো, অভিযুক্ত ‘মিডলম্যান’ উইন চাড্ডা ও হিন্দুজা ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে। ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগের কলঙ্ক পিছু নেয় রাজীবেরও। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের তরফে স্লোগান তোলা হয় ‘রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। তবে দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই মামলার কোনও সুরাহা হয়নি।
এরই মাঝে ২০১৭ সালে ভারত সফরে এসে হার্শম্যান দাবি করেন, ১৯৮৬ সালে ভিপি সিং অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থমন্ত্রকের তরফে কিছু আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার দেওয়া হয় তাদের সংস্থা ফেয়ার ফক্সকে। সেখানে বোফর্স চুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু তছরুপের ঘটনাও ছিল। উল্লেখ্য, এর পরের বছরই অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছিল ভিপি সিংকে। অভিযোগ, কংগ্রেস জমানায় সেই তদন্তের গতিও থামিয়ে দেওয়া হয়। হার্শম্যানের দাবির প্রেক্ষিতে এরপর মাঠে নামে সিবিআই। ফেয়ার ফক্সকে নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট ও তাদের তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট অর্থমন্ত্রকের কাছে চাওয়া হয় সিবিআইয়ের তরফে। তবে অর্থমন্ত্রক জানিয়ে দেয়, এমন কোনও রেকর্ড তাদের কাছে নেই। এই ঘটনায় বোফর্স দুর্নীতির জল্পনা নয়া মাত্রা পায়। গত কয়েক বছরে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে আমেরিকার আধিকারিকদের কাছে বহুবার চিঠি লেখা হয়। তবে কোনও জবাব আসেনি।
অতঃপর আমেরিকাকে এলআর পাঠানোর জন্য গত ১৪ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমতি পাওয়ার পর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আবেদন জানায় তদন্তকারী সংস্থা। ১১ ফেব্রুয়ারি সেই অনুমতি দেওয়া হয় আদালতের তরফে। উল্লেখ্য, এই এলআর কোনও অপরাধ মামলার তদন্তে সাহায্যের জন্য এক দেশের আদালতের তরফে অন্য দেশের আদালতকে পাঠানো চিঠি। এলআর-এর প্রেক্ষিতে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ মাইকেল হার্শম্যান তাঁর সাক্ষাৎকারে যে দাবি করেছেন সেই সংক্রান্ত তথ্যের তদন্ত হওয়া উচিত। আমেরিকা যেন এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে এবং ভারতকে এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হোক।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.