নন্দিতা রায়, বেঙ্গালুরু: আসমুদ্রহিমাচল দেশবাসীর নজর এখন শুধুই কর্ণাটকে। শনিবার অর্থাৎ আজ বিকেল চারটেয় বেঙ্গালুরুর বিধানসভায় কি হয় তাঁর উপর নির্ভর করছে আগামি দিনে জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ৷ ‘ফ্লোর টেস্টে’ উত্তীর্ণ হতে পারবেন ইয়েদি ? নাকি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই হাতছাড়া হবে তাঁর কুর্সি? চড়ছে রাজনৈতিক উষ্ণতার পারদ৷ এর আগেও সাতদিনের মুখ্যমন্ত্রী থাকার নজির রয়েছে ইয়েদুরাপ্পার। সাতদিন পর হেরে গিয়েছিলেন আস্থাভোটে। এবারেও কী সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে? রাজনৈতিক চাপানউতোরে এখন উৎকণ্ঠায় বিজেপি, কংগ্রেস দুই শিবিরই৷
রাজ্যপালের নির্দেশে আস্থা ভোটের জন্য ১৫ দিন সময় পেয়েছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। ২ সপ্তাহের বেশি সময়ে বিরোধী শিবিরের অন্তত গোটা সাতেক বিধায়ক ভাঙিয়ে আনার ব্যপারে প্রায় নিশ্চিত ছিল বিজেপি শিবির। কিন্তু গোল বাধল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর। মাত্র একদিনের নোটিসে আস্থা ভোটের নির্দেশ আসায় বেশ চাপে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, ঘর বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি করছে না বিরোধীরাও। বিজেপি শিবিরের নাগাল এড়াতে বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত বিধায়কদের রাতারাতি হায়দরাবাদে সরিয়ে ফেলেছিল কংগ্রেস এবং জেডিএস। কিন্তু সত্ত্বেও যেন আতঙ্ক কমছে না বিরোধী শিবিরে। ইতিমধ্যেই জেডিএসের ২ এবং কংগ্রেসের এক বিধায়ককে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এক কংগ্রেস বিধায়ক একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে দাবি করেছেন, ‘তাঁকে ঘুষ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বিজেপির এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা।‘ এসব অভিযোগ অবশ্য ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি। তারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ব্যপারে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, কংগ্রেসের অন্তত ১২ জন এবং জেডিএসের অন্তত ২ জন বিধায়ক নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাদের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার আদালতে হলফনামা দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাও দাবি করেছিলেন তাঁর কাছে উপযুক্ত সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন আছে। গতকাল ফের সেই দাবি করেছেন বিজেপির কর্ণাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রকাশ জাভরেকর।
এদিকে, আজকে বিধানসভায় ‘ফ্লোর টেষ্ট’ পরিচালনার জন্য বিজেপি বিধায়ক কেজি বোপ্পাইয়াকে প্রোটেম স্পিকার অর্থাৎ অর্ন্তবর্তীকালীন অধ্যক্ষ হিসেব নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বাজুভাই বালা৷ তাতেও তীব্র আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস৷ ৮ বারের কংগ্রেস বিধায়ক আরভি দেশপান্ডেকে উপেক্ষা করে কেন পাঁচবারের বিধায়ক বোপ্পাইয়াকে বেছে নিলেন রাজ্যপাল বাজুভাই বালা? প্রশ্ন তুলছে রাহুল গান্ধীর দল৷ বোপ্পাইয়াকে নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তির মূল করাণ অবশ্য পুরোপুরি রাজনৈতিক৷ এর আগে ২০১০ সালে যখন আস্থা ভোট হয়েছিল তখন ইয়েদুরাপ্পাকে জিতিয়ে দিতে মোট ১৬ বিধায়কের বিধায়ক পদ অনৈতিকভাবে বাতিল করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বোপ্পাইয়ার বিরুদ্ধে৷
অন্যদিকে, দাক্ষিণাত্যের পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালই এক ট্যুইটে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে আমরা যথেষ্ট সম্মান জানাচ্ছি। আস্থাভোটের উপর আমাদের নজর থাকবে। কর্ণাটকের আস্থাভোটের পর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে আঞ্চলিক দলগুলি।’ ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই কর্ণাটকের পরিস্থিতির দিকে নিয়মিত নজর রাখছেন তৃণমূলনেত্রী। জেডিএসের দুই শীর্ষ নেতা দেবেগৌড়া এবং কুমারস্বামীকে ফোন করে কংগ্রসের সমর্থনে সরকার গড়ার পরামর্শও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটক নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তৃণমূলনেত্রীও চাইছেন, বিজেপি নয়, সরকার গড়ুক বিরোধী জোটই। যাতে লোকসভার আগে দাক্ষিণাত্যে কিছুটা হলেও ধাক্কা খায় গেরুয়া শিবির। তবে, পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে সে পূর্বাভাস এখনই দিতে পারছেন না অতি বড় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.