বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: ২৪ ঘণ্টায় দু’বার। করোনার দায় রাজ্যগুলির উপরেই চাপালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শনিবার তাঁর অভিযোগ, দৈনিক সংক্রমণ নিয়ে সঠিক সংখ্যা এখনও প্রকাশ করছে না একাধিক রাজ্য। আর তাতেই জটিলতা বাড়ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, সঠিক তথ্য না থাকার ফলেই কেন্দ্রের পক্ষে ভয়াবহ এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
শনিবার করোনা (CoronaVirus) নিয়ে আরও একপ্রস্থ বৈঠক করেন তিনি। এই বৈঠকেও কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের আরও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “রাজ্যগুলিকে সঠিক আক্রান্তের সংখ্যা জানানোর জন্য আরও উৎসাহিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা পরিস্থিতির চাপে পড়ে সঠিক সংখ্যা গোপন না করে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।” করোনা মোকাবিলায় এখন ঘরে-বাইরে চাপের মধ্যে কেন্দ্র। বিরোধী থেকে আন্তর্জাতিক মহল। এদিন সেই তালিকায় যোগ হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, কেন্দ্রের উপর থেকে চাপ এড়াতে এখন রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলার চেষ্টা চলছে। এদিনের বৈঠকে রাজ্যগুলিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কথাই ঠারেঠোরে বোঝাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কী ভাবে কাজ করা হবে, তা নিয়েও একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রের তালেই যাতে রাজ্যগুলি সুর মেলায় এখন থেকে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের এই বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোদি বলেছেন, “দেশের যে সমস্ত রাজ্য ও জেলাগুলিতে নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্তের হার এখনও বেশি সেখানে স্থানীয়ভাবে ছোটো ছোটো কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করা, আরটিপিসিআর (RT-PCR) এবং র্যাপিড টেস্ট, উভয় পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর উপরেও গুরুত্ব দিয়ে হবে। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে নিশ্চিত করতে হবে।”
দায়ের পাশাপাশি রাজ্যের উপর দায়িত্বও চাপিয়েছেন মোদি। দেশের প্রতিটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেও কীভাবে কাজ হবে, তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হলেও, গ্রামে গ্রামে করোনা পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে বলাই বাহুল্য রাজ্যকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে কীভাবে গ্রামে কাজ হবে, এই ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করবে কিনা, সেই উত্তর এদিনের বৈঠকে অধরা রয়ে গিয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য মজবুত করে সেখানে করোনা মোকাবিলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাজে লাগানো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্থানীয় ভাষার ব্যবহার করা, কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের মত একগুচ্ছ নিদানও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। সেখানকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে মজবুত করতে হবে। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রয়োজনীয় সব রকম চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁদের আরও অধিকার প্রদান করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে হোম আইসোলেশন এবং সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কিত যাবতীয় নীতি-নির্দেশিকা স্থানীয় ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। ” একইসঙ্গে গ্রামাঞ্চলে অক্সিজেন পাঠানো নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ভেন্টিলেটরের মতো যন্ত্রগুলি চালানোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ধরনের চিকিৎসা উপকরণ গুলির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে।” করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গ্রামাঞ্চল। যা কেন্দ্রের স্বস্তিও কেড়ে নিয়েছে। তাই গ্রামের উপর নিজের সরকারের ফোকাস করছেন নরেন্দ্র মোদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.