ছবি: প্রতীকী
প্রীতিকা দত্ত: ১৫ আগস্টে আসছে করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিরোধীরা এর মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজতে শুরু করেছেন। কেউ আবার বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতবাসীর ‘দেশাত্মবোধকে সুড়সুড়ি’ দিতেই ১৫ আগস্টে কোভ্যাক্সিন আনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই সব বিতর্কের মধ্যেই এবার মুখ খুলল ICMR। জানাল, লাল সুতোর গেরো থেকে করোনার ভ্যাকসিনকে রক্ষা করতেই এমন সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে শনিবার একটি বিবৃতিও জারি করেছে তারা।
সাধারণত কোনও ভ্যাকসিন যখন বাজারে আসে, তার আগে একটি ট্রায়াল হয়। যার নাম ব়্যান্ডামাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল বা RCT। এই ট্রায়ালের প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। ভাইরোলজিস্টদের মতে সব মহাদেশের স্থান, বয়স, বর্ণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্বিশেষে মানুষের উপর এই ট্রায়াল করা হয়। সেটা ১০০ বা ২০০ জনকে নিয়ে নয়, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে। কারণ যদি কারওর শরীরে আগে থেকেই করোনার অ্যান্টিবডি স্বাভাবিক নিয়মে তৈরি হয়ে থাকে তবে তার উপর ভাইরাসের কোনও প্রভাব পড়বে না। ফলে ভ্যাকসিনেরও কোনও ফলাফল দেখা যাবে না। এই সমস্যা এড়াতেই এই ট্রায়াল রান।
কোনও ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়াল অতিক্রম করলেই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যেতে পারে। প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অর্থ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা। কোভ্যাকসিন সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। তাই একে বাজি রাখছে ICMR। কিন্তু মানব শরীরে এর প্রভাব কতটা, তা এখনও জানা যায়নি। একদল বিজ্ঞানীর মতে, যদি প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কোনও ভ্যাকসিন পাশ করে যায়, তবে মানবশরীরে একটু হলেও তা ফলাফল দেয়। সোসাইটি অফ সোশ্যাল ফার্মোকোলজির স্বপন জানা বলেন, ‘এত তাড়াহুড়োর দরকার নেই। সত্য যাচাই করতে হবে এবং তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই। এই ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিজ্ঞান ছাড়িয়ে মুনাফা অর্জনে জন্য নয়।’
ICMR এও বলেছে কোভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়াল চালু হয়নি। চালু হবে শীঘ্রই এবং তাতে ভারত বায়োটেক সবসময় ICMR-এর পাশে রয়েছে। এই সংস্থা বিশ্বের ৬৫টি দেশে প্রতিষেধক সরবরাহ করে। ফলে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন অপ্রতুল। গবেষকরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বৃথা না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণত কোনও ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য ১৫ মাস সময় লাগে। ভারতীয় ড্রাগ কন্টোলের নিয়মও তাই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশ যত দ্রুত সম্ভব করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণত কোনও ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয় তিনটি প্রক্রিয়ায়। এক্ষেত্রে প্রথম দুটি পর্যায় একসঙ্গে করে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।
কোনও বেআইনি অনৈতিক পথ না নিয়ে যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এগোনো যায়, তবে এই ৪৫ দিন সময়সীমা যথেষ্ট নয়। কিন্তু সোজা রাস্তায় গেলে ট্রায়ালেই অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। এদিকে করোনা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এই পথ অবলম্বন করার মতো সময় নেই। তাই দেশকে করোনা মুক্ত করতে এবং লাল ফিতের গেরো থেকে কোভ্যাক্সিনকে অব্যহতি দিতে ফাস্ট-ট্র্যাকিং ছাড়া আর কোনও পথ নেই বলে মনে করছেন অনেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.