Advertisement
Advertisement
India Pakistan War Update

‘যথেষ্ট হয়েছে!’ প্রতিশোধ চেয়ে ফুঁসছেন পুঞ্চবাসী

'ভীরুতার প্রমাণ দিল পাকিস্তান', বলছেন বাসিন্দারা।

India Pakistan War Update: Poonch residents seek revenge for Pakistan attack
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 9, 2025 10:27 am
  • Updated:May 9, 2025 12:20 pm  

সোমনাথ রায়: “অনেক হয়েছে। অব কি বার উন লোগো কো আর পার কা জবাব দেনা চাহিয়ে।”

পাক মর্টারে ক্ষতিগ্রস্ত পুঞ্চের গুরুদ্বার লাগোয়া দোতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল স্থানীয় দিলবাগ সিংয়ের সঙ্গে। পাশে ছিলেন গুরুদ্বারের গ্রন্থী সাবর সিং। বাড়ির ছাদ থেকে গুরুদ্বারের ঠিক উলটোদিকে তাকালে সবুজে ঘেরা যে পাহাড় দেখা যাচ্ছে, সেই পতাকা নাকি তেরঙ্গা নয়। ওড়ে সাদা সবুজ পতাকা। ওটির ঠিকানা পাক অধিকৃত কাশ্মীর। বুধবার সকাল সাতটার সামান্য কিছু বাদে ওপার থেকে উড়ে আসা মর্টারে ভেঙে গিয়েছে গুরুদ্বারের একাংশ। সেই মর্টারের স্‌প্লিন্টারের জেরে ফুটো হয়ে গিয়েছে সংলগ্ন বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক। কোনওটির দেওয়ালে প্রচুর গর্ত। একটি বাড়ির ভিতর আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে জানালার কাচ, কাঠের টুকরো।

Advertisement

২২ এপ্রিল, বৈসরন নাশকতার পর যেভাবে নিয়ম করে প্রতি রাতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলাগুলি করছে ‘পাপিস্তান’, তার অন্যথা হয়নি মঙ্গল-বুধের সংযোগকারী রাতেও। দু’টো নাগাদ শুরু হয় পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ। এতদিন হালকা গোলাগুলি চালালেও অপরাশেন সিঁদুরের বদলা নিতে এবার হেভি আর্টিলারি ও মর্টার উড়ে আসে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে।
দেড়দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা এখনও যেন চিৎকার করে জানান দিচ্ছে পুঞ্চ বাস স্ট্যান্ড, বাজার, মানকোট, মেনধার, থান্ডি কাসি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকারথে পড়ে থাকা পুড়ে যাওয়া বাইকের অবশেষ, স্‌প্লিন্টারে ক্ষতবিক্ষত গাড়ি, ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া দোকান, গুঁড়িয়ে যাওয়া পেট্রোল পাম্পের একাংশ। এদিক-ওদিক চাপ চাপ হয়ে জমে থাকা রক্ত। একই ছবি আছে কাশ্মীরের দিকে উরি, কুপওয়ারা-সহ নানা জায়গায়।

শুধু পুঞ্চের গুরুদ্বারই নয়। গ্রন্থীজির বক্তব্য অনুযায়ী, পাক মর্টার এসে পড়েছে পার্শ্ববর্তী এক মন্দিরে, মাদ্রাসায়। ইসলামে বিশ্বাসী পাক সেনার আঘাতে যেমন মৃত্যু হয়েছে প্রচুর হিন্দু, শিখের, তেমনই মারা গিয়েছেন সেই মাদ্রাসার শিক্ষিকা। গাড়িতে করে সপরিবার পুঞ্চ থেকে রাজৌরির দিকে যাচ্ছিল আরেক মুসলিম পরিবার। মর্টারের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ছোট্ট জোয়া ও জাইনের। ১২ বছরের যমজ ছেলেমেয়ের দেহ কবর দিয়ে হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যুশয্যায় থাকা স্বামী রামিজের মাথার কাছে বসে হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছেন হতভাগ্য মা আরুশা। এখনও পর্যন্ত পাক বাহিনীর কাপুরুষোচিত বর্বর হানায় পাঁচ শিশু, তিন মহিলা-সহ মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, আহত অর্ধশতের বেশি। শহিদ হয়েছেন ৫ ফিল্ড রেজিমেন্টের ল‌্যান্স নায়েক দীনেশ কুমার।

পুঞ্চ শহরের যেখানেই যাওয়া যায়, এই ধরনের কান্না, হতাশা, ক্ষোভের ছবি নজরে আসবে। আর যা চোখে পড়বে, তা হল কেন্দ্রের কাছে বদলা নেওয়ার দাবি। পুঞ্চের প্রবীণরা বলছিলেন, সেই ১৯৭১ সালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তারপর একবারই এভাবে ওপারের মর্টারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছিল শহর পুঞ্চকে। এর বাইরে নিয়ম করে রোজ যেভাবে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তা সীমাবদ্ধ থাকবে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছিই। শহর পর্যন্ত চলে আসে না। এবার যে দুঃসাহস ওরা দেখিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত তার উচিত শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। 

জগজিৎ সিং নামক পুঞ্চের এক মধ্যবয়সি বলছিলেন, “আরও একবার নিজেদের ভীরুতার প্রমাণ দিল পাকিস্তান (Pakistan)। আমাদের সেনার মোকাবিলা করার ক্ষমতা ওদের নেই। তাই জনবসতির উপর আঘাত হানছে।” গ্রন্থী সাবর সিং বলছিলেন, “আর যদি মিনিট কুড়ি আগে গোলা এসে পড়ত, কী যে হত! যে সময় পড়েছে, তার কিছু আগেই প্রার্থনা শেষ করে সবাই চলে গিয়েছিল। আমিও ছিলাম না। প্রার্থনার সময় হলে অন্তত ১০০ জন মারা যেত।” একটু থেমে বলেন, “৫৭ বছর বয়স হয়ে গেল আমার। কখনও দেখিনি এভাবে শহরের ভিতর হানা হয়েছে। এমনকী কারগিল যুদ্ধের সময়ও না। ধর্মস্থান, স্কুলগুলোকেও ছাড়ল না? ওয়াহে গুরু ওদের কৃপা করুন।”

গ্রন্থীর মতো এতখানি দয়াপরবশ হতে অবশ্য পারেননি বছর পঁয়ত্রিশের দিলবাগ সিং। বললেন, “অনেক হয়েছে, আর না। এটাই সঠিক সময়। সরকারের উচিত ওদের উচিত শিক্ষা দেওয়া। ওরা বারবার এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে আর আমরা ছেড়ে দিই। এর জন্যই এত বাড় বেড়েছে। একবার আর পারের জবাব দিয়ে দিলেই চিরতরে শান্ত হয়ে যাবে।”

অপারেশন সিঁদুরের খবর সামনে আসার পর বুধবার দিল্লি থেকে শুরু হয় জম্মু-কাশ্মীরের উদ্দেশে যাত্রা। ভোর পৌনে চারটে নাগাদ জম্মুতে নেমে আধঘণ্টার জন্য হোটেলে ঢুকে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে পড়া পুঞ্চের উদ্দেশে। স্থানীয় ড্রাইভার যোগীন্দর পাল মুখ কাঁচুমাচু করে শুধোলেন, “এই পরিস্থিতিতে ওখানে যাওয়া কি ঠিক হবে?” মুখে বলতে হয়নি, চোখের দিকে তাকিয়েই উত্তর পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সকালে জম্মু থেকে পুঞ্চ যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় নজরে এসেছে হেভি আর্টিলারি নিয়ে মুভমেন্ট করছে সেনা। অবিলম্বে ফরোয়ার্ড পোস্টে যাওয়ার নির্দেশও এসেছে বলে শোনা গিয়েছে। জম্মুতে ব্ল্যাকআউট, সাইরেন বেজেছে, রাজৌরিতেও হোটেলে আলো নেই। রাজৌরি পার করার পর এক চায়ের দোকানে দেখা পুঞ্চ থেকে জম্মুর দিকে রওনা দেওয়া এক পরিবারের সঙ্গে। বৃদ্ধ মা, বাবা, বোন, স্ত্রী, দুই সন্তান ও ড্রাইভারকে নিয়ে দু’টি গাড়ি করে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করা পাপু সিং বলছিলেন, “সরকার ওদের আক্রমণ করেছে, বেশ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানও যে চুপ করে থাকবে না, সেই খবর কি ছিল না? আমাদের তো অ্যালার্ট করে দেওয়া উচিত ছিল। আগেই সরে যেতাম। আমাদের না হয় সামর্থ্য আছে, গরিব যাঁদের অর্থবল নেই, তাঁরা কীভাবে, কোথায় যাবেন? একটা ক্যাম্পও কি করা যেত না? রাম ভরোসে ছেড়ে দেওয়ার কোনও মানে হয়?” দম নিয়ে বললেন, “না, সরকারের বা সেনার সমালোচনা করছি না। নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রশ্ন করছি শুধু।”

ঠিক এই কথাই দিন দশেক আগে দ্রাসে শোনা গিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত নায়েক মহম্মদ ইউসুফ লোনের মুখে। যাঁর পরিবার প্রথম ভারতীয় সেনাকে ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে পাক সেনার উপস্থিতির জানান দিয়েছিল। শুধু এই দু’জনই নয়। ‘মু তোড় জবাব দেওয়া’-র কথা এখন ১৪০ কোটির মুখেই। আপাতত যা শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওপারের একাধিক সেনা ছাউনি। তবে আর পারের জবাব কি দেবে ভারত? উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতের গর্ভে।

আমরা কয়েকজন সাংবাদিক রয়েছি রাজৌরির একটি হোটেলে। রাত বাড়তেই ব্ল‌্যাকআউট হয়ে গেল। হোটেল থেকে আমরা সবাই অন্ধকার রাস্তায় নেমে এলাম। সাইরেল বাজছে। দেখলাম কালে আকাশ চিড়ে মুহুর্মুহ উড়ে যাচ্ছে মিশাইল। ভারতের (India) প্রতিরোধে ধংস হয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে ড্রোন। রাস্তাতেও কাউকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়িতে ঢুকে পড়তে বলছে বাহিনী। রাত দুটো নাগাদ মনে হল পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা জেগে আছি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement