সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী। কিন্তু তার ভাঁড়ারেই কিনা মজুত নেই যুদ্ধের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ এবং অস্ত্রশস্ত্র। প্রতিরক্ষার জন্য ভারতীয় সেনার হাতে অস্ত্রের এই ঘাটতি নিয়েই শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করে সংসদে রিপোর্ট পেশ করল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) বা ক্যাগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর হাতে এখন যে পরিমাণ গোলাবারুদ রয়েছে, তা দিয়ে কেবলমাত্র ১০ দিনই যুদ্ধ করা সম্ভব হবে। তারপরেই ফুরিয়ে যাবে গোলাবারুদের ভাঁড়ার।
রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০১৩-র পর থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ গোলাবারুদের গুণগত মানের কোনও উন্নতিই হয়নি। সেনাবাহিনীতে মজুত থাকা ৫৫ শতাংশ রকমের গোলাবারুদের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় জোগান খুবই কম রয়েছে। আর যে ৪০ শতাংশ অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে, তা দিয়ে যুদ্ধ বাধলে ১০ দিন পর্যন্তই লড়াই করা সম্ভব। এছাড়া কামান এবং ট্যাঙ্কের জন্য যে পরিমাণ গোলাগুলি প্রয়োজন, তাও সংখ্যায় খুবই কম রয়েছে। এছাড়া চারটির মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজে প্রয়োজনীয় অস্ত্র মজুত না থাকায় দোষারোপ করা হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীকেও। সমালোচিত হয়েছে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডও। ২০১৩-র মার্চ থেকে তাদের দেওয়া অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া ওই বছরই ফ্যাক্টরি বোর্ডকে ২০১৯ পর্যন্ত রোডম্যাপের কথা জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি তারা। এজন্যও ওই বোর্ডকে তুলোধোনা করা হয়েছে রিপোর্টে।
সিএজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সতর্ক করে বলা হয়েছিল সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ অনেক কমে গিয়েছে। তারপর ২০১৫ সালেও রিপোর্ট পেশ করে বলা হয়েছিল সেনাবাহিনীর কাছে যা অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ আছে তাতে ২০ দিনের বেশি যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। এমনকী যে সব অস্ত্রশস্ত্র আছে তার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই রিপোর্টে আরও প্রকাশিত হযেছে, ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতি মেটাতে এই বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের মধ্যে এই ঘাটতি পূরণ করার কথা বলা হয়েছিল বাজেটে। কিন্তু দেখা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত তা করা হয়নি।
সম্প্রতি পাকিস্তান ও চিন, প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেকোনও সময় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই পরিস্থিতিতে নতুন এই রিপোর্ট কেন্দ্রের কপালে ইতিমধ্যে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন এক সেনা আধিকারিক বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভাঁড়ারে ইলেকট্রনিক ফিউজের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। ছোট অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রে এই ধরনের ফিউজ বা চার্জার ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু কামান বা ক্ষেপণাস্ত্র অথবা মর্টারের ক্ষেত্রে এগুলি ব্যবহৃত হয়। আর তখনই ভারতীয় সেনা মুশকিলে পড়তে পারে।’
তবে ক্যাগের এই রিপোর্টের পরই গোটা দেশে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সীমান্তে এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতি, সেখানে কেন একটি দেশের ভাঁড়ারে উপযুক্ত পরিমাণ গোলাবারুদ মজুত থাকবে না? উঠছে এমনই প্রশ্ন। সূত্র মারফত খবর, চাঞ্চল্যকর এই রিপোর্টের পরই নাকি নড়েচড়ে বসেছে প্রতিরক্ষামন্ত্রক। আগামী মাস থেকেই সেনার ভাঁড়ারে নতুন অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ আমদানিও শুরু হবে। পাশাপাশি আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল শেষ হওয়ার আগেই ৪০ দিন যাতে যুদ্ধ করতে পারে ভারতীয় সেনা, সেই জন্য পরিমাণমাফিক গোলাবারুদও সরবরাহ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.