সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শাহিনবাগ থাকবে। সেখানকার সিএএ-বিরোধী আন্দোলনও সম্ভবত চলবে। কিন্তু চার মাসের ফুটফুটে মহম্মদ জাহানকে আর কখনও দেখা যাবে না। রাজধানীর কুখ্যাত ঠান্ডা তার একরত্তি প্রাণটুকু কেড়ে নিয়েছে। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে সে। অথচ ছেলেকে হারিয়েও নিজেদের সংকল্প থেকে সরে আসতে নারাজ জাহানের বাবা-মা। সন্তানহারা মহম্মদ আরিফ আর নাজিয়ার দাবি, আন্দোলন তাঁরা চালিয়েই যাবেন। ‘‘আর কিছু না হোক, অন্তত বাকি দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তো বটেই! একটা নিরাপদ আগামী তো সকলেরই কাম্য, নয় কী?’’, প্রতিক্রিয়া দম্পতির।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা CAA‘র বিরোধিতায় গত প্রায় ৫০ দিন ধরে আন্দোলন চলছে শাহিনবাগে। আর রোজই নিজের কনিষ্ঠ সন্তানটিকে নিয়ে আন্দোলন মঞ্চে শামিল হতেন আরিফ এবং নাজিয়া। ছোট্ট জাহান হাতে হাতে ঘুরত সেখানে। পালা করে করে তাকে সামলানোর দায়িত্ব নিতেন শাহিনবাগের আন্দোলনকারী মহিলারা। কেউ খাওয়াতেন, কেউ ঘুম পাড়াতেন আবার কেউ স্নেহবশত গালে এঁকে দিতেন তেরঙ্গা। গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই শাহিনবাগই হয়ে উঠেছিল তার ঘর, খেলার জায়গা। কিন্তু দিল্লির বাটলা হাউস এলাকার অসচ্ছল ঘর থেকে উঠে আসা আরিফ ও নাজিয়া বুঝতে পারেনি, রাজধানীর কুখ্যাত ঠান্ডায়, খোলা আকাশের নিচে ওই একরত্তি শিশুকে দিনের পর দিন, রাখার পরিণাম কী ভয়ংকর হতে পারে! যখন বুঝলেন, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। খুদে শরীরে বাসা বেঁধে ফেলেছে সর্দি, কাশি। একরত্তি শরীরটা লড়তে পারেনি সেই হাড়কাঁপানো ঠান্ডার সঙ্গে। ঘুমের মধ্যেই বিদায় জানিয়েছে।
নাজিয়ার কথায়, ‘‘গত ৩০ জানুয়ারি, আন্দোলন মঞ্চ থেকে বাড়ি ফিরি আমরা। রাত তখন একটা বাজে। আমার পাঁচ বছরের মেয়ে আর এক বছরের ছেলের পর, সবচেয়ে ছোট জাহানকেও ঘুম পাড়িয়ে দিই। তার পর নিজে শুতে চলে যাই। পরদিন সকালে উঠে দেখি, জাহানের শরীরে কোনও স্পন্দন নেই। নড়ছে-চড়ছে না। সঙ্গে সঙ্গে কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, অনেক আগেই মারা গিয়েছে ও। আমাদের জাহান, ঘুমের মধ্যেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।’’ কিন্তু সন্তানকে হারানোর পরও কেন ফের শাহিনবাগের আন্দোলন মঞ্চে যাচ্ছেন জরির এমব্রয়ডারি কাজ করার পাশাপাশি ই-রিকশা চালানো আরিফ? নাজিয়াই বা কী করে পারবেন সেখানে আবার যেতে?
দম্পতির জবাব, ‘‘আমার আরও তো দুটো সন্তান আছে। ওদের ভবিষ্যৎ কে দেখবে? CAA ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন করছে। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।’’ সন্তানের মৃত্যুর জন্য সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আরিফ বলেন, ‘‘সরকার যদি সিএএ, এনআরসি না আনত, মানুষ প্রতিবাদ করত না। আমরাও যোগ দিতাম না আর আমার ছেলেটারও অকালমৃত্যু হত না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.