সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের তোপের পর, এবার পালটা কটাক্ষ রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের। বিলে সই করতে রাষ্ট্রপতিকে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দেওয়া ঘটনায় দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন ধনকড়। পালটা এবার কপিল সিব্বল প্রশ্ন তুললেন, ‘কারা দেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করছে?’
উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্যের পালটা শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিব্বল বলেন, “ওনার মন্তব্যে আমি অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি। আমার মনে হয় যখন বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্ত সরকারের পছন্দ হয় না তখনই এই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়। যখন তাঁদের পক্ষে সিদ্ধান্ত যায়, তখন সব ঠিক থাকে। যেমন রামমন্দির ও ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।” এরপরই ধনকড়কে তোপ দেগে বলেন, “উনি কীভাবে বলতে পারেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২কে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে? আপনি জানেন সুপ্রিম কোর্টকে অনুচ্ছেদ ১৪২ প্রয়োগের ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে যাতে আইনি জটিলতা পেরিয়ে মানুষ ন্যায়বিচার পান। যখন রাষ্ট্রপতি কোনও সিদ্ধান্ত নেন তা ক্যাবিনেটের পরামর্শ মতো নেন। একইভাবে রাজ্যপালের কাছে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল যায়। সংবিধান রাজ্যপালকে অধিকার দিয়েছে সেই বিল ফেরত পাঠানোর। তবে তা দ্বিতীয়বার তাঁর কাছে এলে তিনি সাক্ষর করতে বাধ্য। রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, এটা মাননীয় ধনকড় মহাশয়ের জানা উচিত।” একইসঙ্গে পালটা তাঁর প্রশ্ন, “উনি তো উলটো কথা বলছেন। সংবিধানে পাশ হওয়া কোনও বিল কী রাষ্ট্রপতি ফেলে রাখতে পারেন?” একইসঙ্গে বলেন, “কীভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে? কারা রাষ্ট্রপতির অধিকার খর্ব করছে?”
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল আইনসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে ঐতিহাসিক মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইনসভা থেকে পাশ হয়ে আসা বিল অনন্তকাল আটকে রাখতে পারেন না রাষ্ট্রপতি। তিনমাসের মধ্যে তাঁকে মতামত জানিয়ে দিতে হবে। রাজ্যপালদের জন্যও ওই একই নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রাজ্যপালের কাছ থেকে আসা বিলে তিনমাসের মধ্যে মতামত জানিয়ে দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। যদি তিনমাসের মধ্যে তা সম্ভব না হয়, তাহলে দেরি হওয়ার যথাযথ কারণ জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে।
উপরাষ্ট্রপতি এভাবে রাষ্ট্রপতিকে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়াটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর প্রশ্ন, “কোন পথে এগোচ্ছে আমাদের দেশ। এ দেশে হচ্ছেটা কী? আমরা গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনওদিন আপস করিনি। আজকের দিনটা দেখার জন্য তো এত সংগ্রাম করিনি। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও একটা বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এটা তো আর সামান্য কিছু নিয়ে মতামত দেওয়া নয়। এখানে বলা হচ্ছে, সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে বিল আইনে পরিণত হবে।” ধনকড় আরও বলেন, “কীসের ভিত্তিতে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে? বিচারব্যবস্থা সংবিধানের ১৪২ ধারাকে নিউক্লিয়ার মিসাইলের মতো ব্যবহার করছে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিচারপতিরাই আইন তৈরি করছেন। তাঁরাই নির্দেশ কার্যকর করছেন। এই বিচারপতিরাই সুপার পার্লামেন্ট হিসাবে কাজ করছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.