ফাইল ছবি
নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: মাওবাদের কাঁটা দেশ থেকে পুরোপুরি উপড়ে ফেলতে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিরাপত্তাবাহিনী। বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কার্যত সেই আভাসই দিলেন ‘অপারেশন সংকল্প’-এর দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে মাওবাদীদের শেষ গড় হয়ে উঠেছে ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমানায় অবস্থিত কারেগুট্টা পাহাড়। তাদের নিকেশ করতে অত্যন্ত দুর্গম এই পাহাড় ঘিরে ফেলে অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। গত ২৪ দিনে এখানে খতম করা হয়েছে ৩১ মাওবাদীকে। এই সাফল্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে আধিকারিকরা জানালেন, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারতের যে লক্ষ্যমাত্র নেওয়া হয়েছে, তা পূরণ হতে চলেছে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলা ‘অপারেশন সংকল্প’-এর সাফল্য ব্যাখ্যা করেন সিআরপিএফের ডিজি, ছত্তিশগড়ের ডিজিপি-সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। সেখানেই জানানো হয়, বিহার, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানার মাও-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে লাগাতার অভিযানের জেরে এই উগ্রপন্থী সংগঠনের বেশিরভাগ শীর্ষ কমান্ডার বর্তমানে ঘাঁটি গেড়েছে কারেগুট্টা পাহাড়ে। প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। পাহাড়ে রয়েছে ২৫০টির বেশি গুহা। এই গুহাগুলিই বর্তমানে মাওবাদীদের ঠিকানা। ৩০০ থেকে ৪০০ মাওবাদী ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে এখানে। মাওবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনাকে নামানো হয়েছে। ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা পাহাড়।
আধিকারিকদের দাবি অনুযায়ী, গত ২১ এপ্রিল থেকে ওই অঞ্চলে শুরু হয় অভিযান। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকাজুড়ে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে যাদের মাথার দাম কয়েক কোটি টাকা। আরও দাবি করা হয়েছে, অভিযানে যাতে কোনও খামতি না থাকে এবং জওয়ানদের কাছে পর্যাপ্ত রসদ পৌঁছে দিতে একাধিক ইউনিট গঠন করা হয়েছে, ব্যবহার করা হচ্ছে বায়ুসেনা ও বিএসএফের কপ্টার। পাহাড়ে ওঠা-নামার রাস্তায় পোঁতা সমস্ত আইইডি ল্যান্ডমাইন নষ্ট করা হয়েছে। ওখানে থাকা ২৮ জন মাওবাদী কমান্ডারকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা গিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর দাবি, ওই পাহাড়ে সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়েই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে মাওবাদীরা। এমনকী সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও গুহার ভিতর হাসপাতালের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
গত ১২ মে এই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ৩১ জন মাওবাদীর দেহ উদ্ধারের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছিল। জানা যায়, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় এই মাওবাদীদের। বড়সড় সেই অভিযানের পর বুধবার মাও-দমনে নিরাপত্তাবাহিনীর বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে ধরলেন আধিকারিকরা। উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর থেকেই ছত্তিশগড়, ঝড়খণ্ডের মতো মাও অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে মাওবিরোধী অভিযান ব্যাপক গতি পেয়েছে। পুলিশের মতে, কারেগুট্টা পাহাড়ি এলাকা মাওবাদীদের শেষ শক্তঘাঁটি। এই ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতেই এবার কোমর বেঁধে নামল নিরাপত্তাবাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.