সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এখনও অগ্নিগর্ভ মণিপুর (Manipur)। শুক্রবার ইম্ফলে খুন হয়েছেন এক আয়কর কর্মী। আতঙ্কে রাজ্য ছেড়ে অসমে পালিয়েছেন প্রায় ১ হাজারেরও বেশি নাগরিক। শূন্য রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনা। সব মিলিয়ে এখনও আতঙ্কের চোরাস্রোত বইছে মণিপুর জুড়ে। বাতিল হয়েছে সমস্ত ট্রেন।
মণিপুরের জিরিবাম জেলার কুকি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এল মুয়াংপু পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে প্রথমবারের মতো আশ্রয় নিয়েছেন পড়শি রাজ্য অসমের কাছা়ড় জেলায়। এখনও তিনি ভুলতে পারছেন না বৃহস্পতিবার রাত ১০টার অভিজ্ঞতা। এক সংবাদমাধ্যমকে এই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, ”কয়েক মিনিট লেগেছিল এটা বুঝতে যে আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। উত্তেজিত জনতা স্লোগান দিতে দিতে পাথর ছুঁড়ছিল। ওরা চেয়েছিল আমাদের বাড়িতে আগুন লাগাতে!” ভোর হতেই তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এখনও সেই আতঙ্কের রেশ রয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বরে। এমনই অভিজ্ঞতা অনেকের।
এদিকে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস তথা আইআরএসের তরফে জানানো হয়েছে ইম্ফলে তাদের কর্মী লেটমিনথাং হাউকিপকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে তাদের তরফে। গত দু’দিন ধরেই ভয়াবহ হিংসার সাক্ষী হয়েছে মণিপুর। সম্পত্তি নষ্টের পাশাপাশি ঘটেছে মৃত্যু। বৃহস্পতিবারই দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন রয়েছে সেনা ও আধা সেনা। নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেককে। যদিও সেনা ও পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
বস্তুত, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মণিপুরে অশান্তি চলছে। এর মূলে রয়েছে মেটেই জনজাতির সঙ্গে আদিবাসীদের সংঘাত। মণিপুরের মেটেই জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির তকমা দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। মণিপুরের বিজেপি সরকার সেই দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাতেই ক্ষুব্ধ কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেটেইরাও যদি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। তাছাড়া, মণিপুরের বিজেপি সরকার স্থানীয় বনাঞ্চলগুলিতে সমীক্ষা চালাচ্ছে। আদিবাসীদের আশঙ্কা, সরকার এবার বনভূমি ধ্বংস করতে চলেছে। তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণভাবে গত কয়েক মাসে সেরাজ্যে অন্তত তিনটি গির্জা ভেঙেছে প্রশাসন। সরকারের দাবি, ওই গির্জাগুলি ছিল বেআইনি। সরকারের এই পদক্ষেপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আদিবাসী খ্রিস্টানরা। সেটাও বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.