সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে।’ প্রচলিত এই প্রবাদকে চোখের সামনে বার বার সত্যি প্রমাণ করে দেখাতেন কারে ‘মস্তানাম্মা’। একশোর কোঠা পেরিয়েও এই মহিলা ‘শেফ’ ইউটিউবজুড়ে রাজত্ব করতেন অনায়াসে। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ‘কান্ট্রি ফুডস’-এর ‘সাবসক্রাইবড’ গ্রাহক সংখ্যা ১২.৮ লক্ষ। ছ’মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার গুড়িওয়াড়া গ্রামের এই প্রবীণ বাসিন্দা। গত সোমবার রাতে তাঁর জীবনাবসান হয়। যদিও মৃত্যুর খবর জানাজানি অনেক পরে। ‘মস্তানাম্মা’র বয়স হয়েছিল ১০৭ বছর।
বয়সকে হারিয়ে, শারীরিক দুর্বলতাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে, ‘লেটেস্ট’ সব ‘টেকনোলজি’কে শতহস্ত দূরে সরিয়ে রেখে শতায়ু এই মহিলা খাঁটি দেশি পদ্ধতিতে রান্না করতেন একের পর এক উপাদেয় পদ। ঝাঁ-চকচকে রান্নাঘরে নয়, খোলা মাঠে। ননস্টিক কুকওয়্যারে নয়, সাধারণ স্টিলের থালা-বাটি-কড়াইয়ে। গ্যাস বা স্টোভে নয়, কাঠকয়লা পুড়িয়ে। চামচ-কাটোরায় মেপে মেপে নয়, হাতের আন্দাজে। মহিলা নিজেই কুটনো কুটতেন, নিজেই রাঁধতেন। কখনও সখনও প্রথমটার ব্যতিক্রম ঘটলেও দ্বিতীয়টার কোনওদিন ঘটেনি। ফোকলা মুখে একগাল হেসে, পরম যত্ন, আর মনোযোগ দিয়ে ‘আম্মা’ যখন রান্না করতেন, ক্যামেরায় তা রেকর্ড করতেন তাঁরই নাতি লক্ষ্মণ। সেই ভিডিওই পরে ‘আপলোড’ করা হত ‘কান্ট্রি ফুডস’ চ্যানেলে। অগুনতি দর্শক তা দেখতেন এবং পছন্দও করতেন। বিশেষত গত দু’বছরে দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছিল ‘মস্তানাম্মা’-র চ্যানেলের গ্রাহক সংখ্যা।
[ বাবরি ধ্বংসের বর্ষপূর্তিতে কড়া নিরাপত্তা অযোধ্যায় ]
তবে ক্যামেরার সামনে যে রকম সপ্রতিভ এবং হাসিখুশি দেখাত এই জনপ্রিয় মহিলা পাচককে, ততটা উজ্জ্বল ছিল না তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন ‘মস্তানাম্মা’। তাঁর পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। পেটের দায়ে খেত-খামারে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সেভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু ওই যে কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে! রান্নাবাটিতে ‘মস্তানাম্মা’-র গুণের কদর গ্রামবাসীরা এমনিতেই করতেন। তাকেই হাতিয়ার করে ‘আম্মা’-র নাতি লক্ষ্মণ গ্রামের উপকণ্ঠে গড়ে তোলেন একটি রেস্তোরাঁ। সেইখানে আম্মার হাতে তৈরি জিভে জল আনা সব খাবারদাবারের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রেস্তোরাঁর ব্যবসা কাজে দেয়। কিন্তু এখান থেকেই লক্ষ্মণের মাথায় আসে নতুন ‘আইডিয়া’। ঠাকুরমার জন্য ইউটিউবে একখানা চ্যানেল বানিয়ে ফেলেন তিনি। আর তার পর রান্নার ‘লাইভ’ রেকর্ডিং করে সেই সব ভিডিও আপলোড করেন তিনি। ‘সুপারহিট’ হয়ে যান ‘মস্তানাম্মা’। ইউটিউবের গ্রাহকদের মধ্যে আম্মার রান্না করা উপাদেয় সব পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল ‘তরমুজ চিকেন’, ‘এমু এগ কারি’, ‘তেলুগু স্টাইল ব্রিঞ্জল কারি’, ‘বাম্বু বিরিয়ানি’ প্রভৃতি। মস্তানাম্মার মৃত্যুর খবরে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে নেটিজেনদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই শোকবার্তা জানিয়েছেন তাঁকে স্মরণ করে।
[ ‘আমি নির্দোষ’, ভিডিও বার্তায় দাবি বুলন্দশহর কাণ্ডে মূল অভিযুক্তর ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.