Advertisement
Advertisement
Pahalgam Terror Attack

জঙ্গিদের বাড়ি ভেঙে ‘সুযোগ’ হারাচ্ছে মোদি সরকার, হিতে বিপরীত হবে না তো?

গত ছ’দিনে গুঁড়িয়ে গিয়েছে উপত্যকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত দশ সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি।

Modi government action on Pahalgam Terror Attack

জঙ্গি আদিল ঠোকরের বাড়ি। ছবি: পিটিআই।

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:April 30, 2025 2:28 pm
  • Updated:April 30, 2025 2:28 pm  

সোমনাথ রায়, কারগিল: যেভাবে লাগাতার গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি, তার ফলে হিতে বিপরীত হবে না তো? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে করছে কাশ্মীর জুড়ে। গত মঙ্গলবার বৈসরনে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার পর থেকেই জবাব দেওয়া শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্তদের বাড়ি। ত্রালে আসিফ শেখ, বিজবেহারায় আদিল ঠোকরদের বাড়ি গিয়ে যে ছবি চোখে এসেছিল, তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে বাধ্য। দেশাত্মবোধের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখলে যেমন মনে হবে, দেখ কেমন লাগে। তেমনই বাস্তবে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, সন্ত্রাসবাদীকে জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কী দোষ ছিল বৃদ্ধ মা-বাবার?

গত ছ’দিনে গুঁড়িয়ে গিয়েছে উপত্যকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত দশ সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি। অথচ তারা সবাই পাঁচ, সাত, দশ বছর ধরে ঘরছাড়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও যোগাযোগ নেই পরিবারের সঙ্গে। অতীতে বুরহান ওয়ানি, আদিল আহমেদ দারদের বাড়ি, এলাকায় গিয়ে যে প্রশ্ন কানে এসেছিল, এবারও শুনছি একই প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর থেকে কোনও যোগাযোগ রাখে না পরিজনদের সঙ্গে। এমন নয় যে, টাকা পাঠিয়ে সাহায্য করে পরিবারকে। তবে কেন ওদের পাপের শাস্তি ভুগতে হবে নিরপরাধ পরিবারের বাকিদের?

Advertisement

২২ এপ্রিল বৈসরনের ঘটনার পর কাশ্মীরের নানা প্রান্ত থেকে নজরে এসেছে চমকপ্রদ কিছু ছবি। লালচক থেকে শুরু করে পহেলগাঁও বাজার। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় কাশ্মীরিরা। কোথাও আবার হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হয়েছিল প্রতিবাদ। ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগানের সঙ্গে উঠেছিল তাদের যোগ্য জবাব দেওয়ার দাবি। বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসবাদীদের কাশ্মীরিদের হাতে তুলে দিক প্রশাসন। গণপিটুনির পর ঘণ্টা ঘরে ঝুলিয়ে মারা হবে তাদের। অথচ গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় সেই সুর কিছুটা কাটছে বলেই দেখা যাচ্ছে। এক, বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ফলে পরিবারগুলির মাথার ছাদ হারিয়ে যাওয়া। তার উপর আবার যোগ হয়েছে দেশের অন্যান্য প্রান্তে কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচার। পর্যটকদের ছাড়তে গিয়ে জম্মুতেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে কাশ্মীরের ড্রাইভারদের। যার বেশিরভাগই হচ্ছে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতৃত্বে। সব মিলিয়ে কেন্দ্র সরকার, বলা ভালো বিজেপির উপর ক্ষোভ বাড়ছে কাশ্মীরিদের। বক্তব্য, “আমরা তো কিছু করিনি। আমাদের উপর আক্রমণ কেন? যারা বন্দুক তুলে নিয়েছিল, তাদের পরিবারের কী দোষ? ওদের এভাবে হেনস্তা করার কী যুক্তি?”

অতীতেও যেভাবে কাশ্মীরিদের ক্ষোভে প্রলেপ লাগিয়ে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করত এক শ্রেণি, এবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে তারা। ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট ছড়াতে শুরু হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ‘পর্যটকদের আসার জন্য এত আকুতি করা হচ্ছে কেন? নিন্দনীয় ঘটনার গোটাটাই হয়েছে গোয়েন্দাবিভাগের ব্যর্থতায়। আমরা তো কিছু করিনি। উল্টে সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। আমরা কি ভিখারি?’ প্রশ্ন উঠছে পহেলগাঁও ঘটনার নিন্দা করে যেমন প্রতিবাদ হয়েছিল, পড়ুয়া, ড্রাইভারদের হয়ে কেন পথে নামা হচ্ছে না? দাবি করা হচ্ছে, নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে এভাবে বাড়ি ভাঙছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে দেখাচ্ছেন তাঁরা অনেক বড় তির মেরে ফেলছেন। অথচ এটা শুধুই গিমিক আর নিরপরাধীদের উপর অত্যাচার। এই জায়গায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরাও। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলছিলেন, ওদের কথাগুলো খুব একটা ভুল নয়, কিন্তু আমাদেরই বা কী করার আছে! যেমন নির্দেশ আসবে, তেমনই তো করতে হবে।

পহেলগাঁও ঘটনার পাল্টা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে সবরকম সাহায্যের বার্তা দিয়েছিল বিরোধীরা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। ইতিমধ্যেই মোদি জমানায় উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদের খতিয়ান প্রকাশ করে সরকারের ব্যর্থতার কথা সামনে এনেছে কংগ্রেস। সর্বদলীয় বৈঠকে না থেকে বিহারে রাজনৈতিক সভা করতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী নিজের মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন বলে নিন্দা ও সমালোচনাও করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও প্রশ্ন তুলেছেন বাড়ি ভাঙা নিয়ে। রাজনৈতিক কচকচানি সরিয়ে রাখলেও উপত্যকার ছবি দেখে মনে জাগছে প্রশ্ন। বৈসরন কাণ্ডের পর কাশ্মীরিদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, তা নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে না তো?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement