সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধির আরজি জানানো হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। তবে সামাজিক দূরত্ব (Social Boycott) বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষ ক্রমশ আবেগহীন হয়ে পড়ছেন। তারই নিদর্শন মিলল মধ্যপ্রদেশের শিভপুরীতে (Shivpuri)। করোনা মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরলেও সামাজিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে এক যুবককে। ফলে একই পাড়াতে থেকেও অচ্ছুৎ হয়ে পড়েছেন এই যুবক। তাই বাড়ি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
করোনা আতঙ্ক গ্রাস করেছে মানুষের মানবিকতা। পাশের বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আগে মানুষ খোঁজ নিতে যেতেন। তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কেউ অসুস্থ হলে বা সামান্য জ্বরে ভুগছেন এই কথা শুনলেই সন্দিহান দৃষ্টিতে তাঁকে দেখতে থাকনে সকলে। পাড়া বা বন্ধু-বান্ধব তো দূর অস্ত চিকিৎসকরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন রোগীদের থেকে। মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতেও এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি ছিলেন বেশ কিছুদিন। করোনা মুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও ওই যুবককে সুস্থ বলে মেনে নেয়নি সমাজ। করোনার মত মারণ ভাইরাসকে কাবু করে তিনি বাড়ি ফিরলেও সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার তাঁকে একঘরে করে রেখেছে। সেই যুবকের কথায়, “হাসপাতালে থেকে আমি যখন এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করছি তখন জেলা আধিকারিক প্রতিদিন আমার খোঁজ নিয়েছেন। ফলে এই ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর যে জীবন এইভাবে দুর্বিসহ হয়ে উঠবে তা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু আঘাত পেলাম হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে। দেখলাম, আমার প্রতিবেশীরা সকলেই আমায় এড়িয়ে যেতে শুরু করেছেন।” হতাশাগ্রস্ত যুবক আরও বলেন, “এইভাবে একঘরে হয়ে অবজ্ঞা, অবহেলায় বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই আমি বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” শিভপুরীর এই যুবক করোনায় আক্রান্ত এটা জানার পর এই এলাকার ৬৩টি পরিবারের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এমনকি যুবকের বাড়ির পাশের কয়েকটি পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনেও নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। জানা যায়, ১৮ মার্চ দুবাই থেকে এই যুবক ফিরে এসেছিলেন তারপরই তাঁর শরীরে করোনার ভাইরাস মেলে।
যুবকের কথায়, “শুধুমাত্র পরিবেশীরা নন, দুধওয়ালা, সবজিওয়ালা এমনকি কোনও দোকানিদেরও আমার বাড়ির সামনে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় এই পাড়াতে থাকাই আমার দায় হয়ে গেছে। তাই নিজের এতদিনের পরিচিত পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনগনের কাছে আমার আবেদন যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সুশ্রসার পর হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্তকে ছেড়ে দিলেও তাঁকে এইভাবে বর্জন করা উচিৎ নয়।” করোনা ঝড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মানবিকতা বজায় রাখার আরজি জানান এই যুবক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.