বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্য বিজেপি নেতা মুকুল রায়। শনিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে দাঁড়িয়ে মুকুলবাবু বলেন, “সিঙ্গুর আন্দোলন ভুল ছিল। আমি সে সময়ই এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু একথা আজ আমি মন থেকে বুঝতে পারছি। এই স্বীকারও আমার ভিতর থেকে এসেছে।” সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্যই রাজ্যের উন্নতি থমকে গিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। রাজ্যের শিল্পায়ণ না হওয়া থেকে শুরু করে বেকারত্ব বৃদ্ধির মতো সমস্যার জন্যও সিঙ্গুর আন্দোলনকেই দায়ী করেছেন তিনি।
এদিন মুকুলবাবু বলেন, “সিঙ্গুরে আন্দোলনের জন্য সেখানে টাটা গোষ্ঠীর কারখানা না হওয়ায় বাংলায় শিল্পায়ন হয়নি। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি যুবক আজকে কর্মসংস্থানের জন্য দেওয়ালে মাথা খুঁড়ছে।” সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্যই সেখানকার বাসিন্দাদেরও কোনও উন্নতি হয়নি বলেও ইঙ্গিত করেছেন মুকুলবাবু। তিনি বলেছেন, “আজকে সেখানে না হয়েছে শিল্প, না হচ্ছে কৃষি।” সিঙ্গুরের চাষিরা জমি ফেরত পেয়েছেন বলেই সকলের জানা। কিন্তু জমি ফেরত পেলেও সেই জমিতে চাষ হচ্ছে না, সেকথা উল্লেখ করে মুকুলবাবু সুকৌশলে সিঙ্গুরের মানুষের মনে আবারও প্রশ্ন তুলে দিলেন বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। সিঙ্গুরে শিল্প হওয়া উচিত বলেই তিনি মনে করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন মুকুলবাবু। শুধু তিনিই নন, হুগলি আসনটি জেতার পরে সেখানকার নতুন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও সিঙ্গুরে শিল্প হওয়া নিয়ে চেষ্টা করবেন বলেই জানিয়েছিলেন।
একসময়ে তিনি নিজে যে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম শরিক ছিলেন তার জন্য ভুল স্বীকার করে মুকুলবাবুর এদিনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। রাজ্য রাজনীতি তো বটেই, সিঙ্গুর আন্দোলন যে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা সেকথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিঙ্গুর আন্দোলনের হাত ধরেই রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই আন্দোলনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্য রাজনৈতিক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। এবার লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসনটি বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, এই আসনের মধ্যে থাকা সিঙ্গুর বিধানসভাতেও বিজেপি তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে ছিল। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। সদ্য শুক্রবারই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে দলীয় বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
তৃণমূল যখন সিঙ্গুরে হার নিয়ে পর্যালোচনায় ব্যস্ত ঠিক সে সময়েই মুকুলবাবু সিঙ্গুর আন্দোলনকে ‘ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে এবং তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়ে সুক্ষ্ম রাজনৈতিক চাল দিয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যে সিঙ্গুর একসময় তৃণমূলের তুরুপের তাস ছিল আজ তাকেই নিজেদের হাতে নিয়ে এসে ব্যবহার করে তৃণমূলকেই বিপাকে ফেলার জন্য বিজেপি যে ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে, তার প্রমাণ মুকুলবাবুর মন্তব্য থেকেই বোঝা গিয়েছে। এই ইস্যুতে এদিন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গত দিয়েছিলেন। এখন ভুল বললে হবে না। মুকুল রায় ও মুখ্যমন্ত্রী, দু’জনকেই ক্ষমা চাইতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.