ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, জলন্ধর: কেউ নতুন পদ্ধতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া কোলেস্টেরলের চিকিৎসা করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমানোর পথ আবিষ্কার করেছেন। কেউ উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষের মধ্যে থাইরয়েড হওয়ার প্রবণতা এবং তার কারণের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই তরুণ প্রজন্ম। প্রত্যেক গবেষণা মানুষের উপকারের জন্য। এমনই সব গবেষণাকে স্বীকৃতি দিল ১০৬তম ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বোস, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, মেঘনাদ সাহার বাংলা থেকে নাম উজ্জ্বল করলেন নয় বাঙালি গবেষক। এ বছর পাঞ্জাবের জলন্ধরে আয়োজিত সায়েন্স কংগ্রেসের থিম ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতের ভারত। যার মূল মন্ত্র, বিজ্ঞানীদের ভাবনায় সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান। এবং জীবনের মানোন্নয়ন। শ্রীপর্ণা, দিয়োতমা, সোহানা, ঋতম, প্রিয়াঙ্কার মতো বাংলার গবেষকদের বিষয়বস্তুও ছিল তা-ই। সে কারণেই দেশের সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে বিজ্ঞান সম্মেলনে নজির গড়ে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার এসেছে বাংলার ঝুলিতে।
সোমবার বিজ্ঞান সম্মেলনের বিদায়ী অনুষ্ঠানে মোট ন’জন বাঙালি গবেষক শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজনই রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার পেয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীপর্ণা মাজি, সেন্ট জেভিয়ার্সের সোহানা দত্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিয়োতিমা সরকার ও ঋতম বন্দ্যোপাধ্যায়, সিএসআইআর দুর্গাপুরের প্রসেনজিৎ দাস। শ্রেষ্ঠ পোস্টার পুরস্কার পেয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্রাট পাল ও জ্যোতির্ময় গোস্বামী এবং আইসিওআর-দিল্লির বাঙালি গবেষক দেবাশিস গোলুই। এঁদের মধ্যে শ্রীপর্ণা কোলেস্টেরলের ওষুধের সঙ্গে ম্যাগনেটিক ন্যানোপার্টিক্যাল মিশিয়ে চিকিৎসার এক নতুন পদ্ধতি বের করেছেন। আসানসোলের বাসিন্দা এই গবেষকের দাবি, এই পদ্ধতিতে কোলেস্টেরলের ওষুধ নির্দিষ্ট ধমনীর নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে। এর ফলে শরীরের অন্য জায়গায় সেটি ছড়াবে না ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও থাকবে না। চিকিৎসা দ্রুত হবে। হৃদরোগের সম্ভাবনা কমবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বরানগরের বাসিন্দা দিয়োতিমা উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষের মধ্যে থাইরয়েডের প্রবণতার উপর গবেষণা করেছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষক ঋতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণার বিষয় খনিজ বর্জ্য। লোহার খনির পাশের বর্জ্যের পাহাড় হয়ে যায়। সেগুলি থেকে অনেকরকম সমস্যা তৈরি হয়। একটি গাছের সাহায্যে সেই সমস্যা সমাধানের পথ বের করা হয়েছে। অন্যদিকে, কলকাতার বাসিন্দা সোহানা দত্ত ফেলে দেওয়া জিনিস যেমন আখের ছিবড়ে, নারকেলের ছোবড়া, তুশ, তুলোর বর্জ্য দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করেছেন। যা দিয়ে মাশরুমের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে শ্রেষ্ঠ পোস্টার পুরস্কার প্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কার গবেষণার বিষয়, গাছের হরমোন দিয়ে তাদের জীবনশক্তি বৃদ্ধি। তাঁর দাবি, এই পদ্ধতির ফলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ছাড়াই ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যাবে। এছাড়া সম্রাট পাল ও জ্যোতির্ময় গোস্বামী এবং দেবাশিস গোলুইয়ের গবেষণাও একইভাবে সাধারণের মানুষের জীবনে বদল আনবে বলে আশবাদী প্রবীণ বিজ্ঞানীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.