সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেও লাভ বিশেষ হয়নি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর এই নিয়ে হইচই শুরু হয় দেশ জুড়ে। সেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই এবার সংসদীয় কমিটির কাছে স্বীকার করে নিল, নোট বাতিলের পর কত কালো টাকা অর্থনীতি থেকে নির্মূল করা গিয়েছে, সেই বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্যই নেই। আদৌ কালো টাকা নির্মূল হয়েছে কি না, সেটাও তাদের জানা নেই।
সংসদীয় কমিটির কাছে পেশ করা রিপোর্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে, নোটবন্দির পর ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় ফিরে এসেছে প্রায় ১৫.২৮ লক্ষ কোটি টাকা। যেগুলি ভবিষ্যতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। নির্দিষ্ট ও নিয়মিত সময় অন্তর ফের নোট বাতিল করা হবে কি না, সেই বিষয়েই স্পষ্টত কোনও তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে। আরবিআইয়ের এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। গতবছরের ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকে রাতারাতি বাতিল বলে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আশ্বাস দেন, এই কড়া ওষুধে দেশ থেকে হিসাব বহির্ভূত কালো টাকার রোগ নির্মূল হবে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ওই সিদ্ধান্তের পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তার সঙ্গে কেন্দ্রের আশ্বাসের কোনও মিল নেই। প্রধানমন্ত্রী তিন দফায় সময় চেয়ে নিয়েছিলেন দেশবাসীর কাছ থেকে। সেই সব সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও কালো টাকাকে জাতীয় অর্থনীতি থেকে নির্মূল করা যায়নি, বরং শ’য়ে শ’য়ে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত মানুষ মারা গিয়েছেন। চাকরি হারিয়েছেন বহু মানুষ। কমেছে জিডিপি। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির বৃদ্ধি ৬.১ শতাংশে নেমেছে। যার জেরে গোটা ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষের আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমেছে ৭.১ শতাংশে। যা গত তিন বছরে সর্বনিম্ন। গত দুই আর্থিক বর্ষে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৭.৫ ও ৮ শতাংশ। সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস (সিএসও)-এর প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বিরোধীদের তুমুল সমালোচনার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নোট বাতিল নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফিনান্স। কমিটির কাছেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে নথি পেশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে ঠিক কত বাতিল নোট ফিরে এসেছে সেটার হিসাব এখনও চলছে। পাশাপাশি চলছে বাতিল নোটগুলি যাচাই করার কাজও। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর নোট এসেছে, তাই কাজ শেষ হতে খানিকটা সময় লাগবে। দেশের জিডিপি ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে নোটবন্দির প্রভাব জানাতেও ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। তবে আরবিআইয়ের যুক্তি, সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি খানিকটা নিম্নমুখী হলেও তার জন্য নোটবন্দি দায়ী নয়। ২০১৬-১৭ আর্থিকবর্ষের গোড়া থেকেই শিল্প ও চাকরিক্ষেত্রের বাজার খানিকটা মন্দা ছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.