প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। - নিজস্ব চিত্র।
হেমন্ত মৈথিল, লখনউ: সিঁদুর কোনও অপারেশন নয়, এটি একটি সংকল্প। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাশাপাশি তিনি জানান, ভারত কোনও সাধারণ পাক নাগরিককে আক্রমণ করেনি। ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে রবিবার ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন উৎপাদন কেন্দ্রের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন রাজনাথ। সেখানে তিনি বলেন, “ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, যারা মহিলাদের কপালের সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদের জবাব দিতেই অপারেশন সিঁদুর শুরু করে ভারতীয় সেনা। তাই সিঁদুর নিছক কোনও অপারেশন নয়। এটি একটি সংকল্প।” এরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাজনাথ বলেন, “ভারতীয় সেনার গর্জন রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনার সদরদপ্তর পর্যন্ত শোনা গিয়েছে। কিন্তু আমরা পাকিস্তানের কোনও নাগরিককে আক্রমণ করিনি।”একইসঙ্গে তিনি বলেন, “পাকিস্তান নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের আক্রমণের পাশাপাশি বহু মন্দির, গুরুদ্বার এবং গির্জাগুলিতে হামলা চালিয়েছে।”
অন্যদিকে, ব্রহ্মস-এর প্রশংসা করতে গিয়ে রাজনাথ বলেন, “ব্রহ্মস কেবল অস্ত্র নয়, এটি ভারতীয় সেনার শক্তি। শত্রুদের প্রতিরোধ এবং সীমান্ত রক্ষার অঙ্গীকারই হল ব্রহ্মস।” ভারতের প্রতিরক্ষা-স্বনির্ভরতার লক্ষ্যকে শক্তিশালী করার জন্য উত্তরপ্রদেশকে একটি প্রধান সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার উপরেও জোর দেন রাজনাথ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে ভারত ও রাশিয়াত যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় ‘ব্রহ্মস এরোস্পেস’। ব্রহ্মপুত্র ও মস্কো নদীর নামে নামকরণ করা হয় সংস্থাটির। এদেরই তৈরি অত্যাধুনিক ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র। ২০০৬ সালে ভারতীয় স্থলসেনা ও নৌসেনার অস্ত্র ভাণ্ডারে যুক্ত হয় ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র। প্রাথমিকভাবে এর মারণ ক্ষমতা ২৯০ কিলোমিটার থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ৪০০ কিলোমিটার করা হয়। প্রতি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে ব্রহ্মস। যে কোনও টার্গেটে ৯৯.৯৯ শতাংশ নিখুঁত হামলা চালাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র। একবার এই মিসাইল লঞ্চ করা হলে শত্রুর পক্ষে একে আটকানো কার্যত অসম্ভব।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ২৬ নিরস্ত্রকে হত্যা করে লস্করের সঙ্গী সংগঠন টিআরএফের পাঁচ জঙ্গি। পালটা ৭ মে অপরেশন সিঁদুর চালায় ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। এই অভিযানে অন্তত ১০০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়। এরপর রাজস্থান, পাঞ্জাবের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে ড্রোন হামলা চালায় পাকিস্তান। পালটা লাহোর, করাচি-সহ পাকিস্তানের একাধিক শহরে আঘাত হানে ভারত। শেষ পর্যন্ত শনিবার ইসলামাবাদের মিনতিতে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় নয়াদিল্লি। আসলে গত কয়েকদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে লাগাতার পিছিয়ে পড়ছিল পাকিস্তান। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই সন্ধিপ্রস্তাব করে শাহবাজ শরিফ সরকার। আমেরিকার মধ্যস্ততায় সেই প্রস্তাবে রাজি হয় ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.