সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: এ যেন অনেকটা প্রদীপের নিচের অন্ধকার। ন্যায়ের আশায় দেশবাসী যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেখানেই প্রকট লিঙ্গবৈষম্য। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মোট ৩২ জন বিচারপতির মধ্যে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা মাত্র দুই! সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম মহিলা হিসাবে দেশের প্রধান বিচারপতি হতে চলা বি ভি নাগরত্ন ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদি। যিনি আবার ঠিক তিন মাস পর, অর্থাৎ ৯ জুন অবসর নিতে চলেছেন। এর মানে, তার আগে কলেজিয়ামের সুপারিশে কেন্দ্র যদি নতুন কোনও মহিলা বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত না করে, তাহলে তিন মাস বাদে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতির আসনে থাকবেন মাত্র একজন মহিলা।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে সর্বোচ্চ ৩৪ জন বিচারপতি থাকতে পারেন। যার মধ্যে দু’টি আসন এখনও খালি রয়েছে। ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন কলেজিয়াম কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিকে সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে। সেক্ষেত্রে ফাঁকা আসনের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে মাত্র একে। যদিও মে, জুন মাসে প্রধান বিচারপতি-সহ তিন বিচারপতির অবসরের পর সেই সংখ্যা ফের বেড়ে হবে চার। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিচারবিভাগীয় মহলে উঠছে প্রশ্ন। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের মধ্যে কি কোনওভাবে বাড়তে পারে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা?
শুধু সুপ্রিম কোর্টই নয়, এই মুহূর্তে দেশের ২৫টি হাই কোর্টে যে ৭৬৩ জন বিচারপতি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মহিলা বিচারপতি মাত্র ১০৮ জন। অর্থাৎ শতকরা ১৪%। এঁদের মধ্যে শুধু বিচারপতি সুনীতা আগরওয়াল গুজরাট হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। এছাড়া দেশের আর কোনও হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি মহিলা নন। আশ্চর্য হওয়ার বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে আসীন হয়েছেন মাত্র ১১ জন মহিলা বিচারপতি। তাও ২০২১ সালের আগস্টে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ একসঙ্গে নিয়োগ দেন বিচারপতি হিমা কোহলি, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদি ও বিচারপতি বি ভি নাগরত্নকে। অর্থাৎ চার বছর আগে পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মোট মহিলা বিচারপতির অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৮।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, আজ থেকে তিন চার দশক আগে পর্যন্ত আইনি পড়াশুনায় মহিলা অংশীদারিত্ব প্রায় ছিল না বললেই চলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যার পরিবর্তন হয়েছে। এই কারণে জেলা স্তরের আদালতে মহিলা আইনজীবী ও বিচারকের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি হলেও বিচারবিভাগীয় পিরামিডের উপরের দিকে তা নেই। কথাটি যে ভুল নয়, তার প্রমাণও হয়ে যায় কেরলের দিকে তাকালে। সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি ফতেমা বিবির রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলিতে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকদের ৭২ শতাংশই মহিলা। যদিও হাই কোর্টের ৪৪ বিচারপতির মধ্যে মহিলা বিচারপতি মাত্র তিন জন। পাঞ্জাব-হরিয়ানা এবং মাদ্রাজ হাই কোর্টে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা সর্বোচ্চ। এই দুই হাই কোর্টে মোট ৫৩ ও ৬৫ জনের মধ্যে ১৩ জন করে মহিলা বিচারপতি রয়েছেন। উল্টোদিকে মেঘালয়, ত্রিপুরা ও উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টে একজনও মহিলা বিচারপতি নেই।
দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে যে ১০৮ জন মহিলা বিচারপতি বর্তমানে কর্মরত, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন বিচারপতির সংখ্যা মাত্র পাঁচ। ২০১৬ সালে আরও চারজন বিভিন্ন হাই কোর্টে নিযুক্ত হন। এই ন’জনের মধ্যে আবার কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতির কে এস মুদুগল চলতি বছরের শেষে অবসর নেবেন। দেখার শুধু এঁদের মধ্যে কাউকে অথবা কোনও অভিজ্ঞ আইনজীবীকে সরাসরি মনোনীত করে সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা বাড়ে কিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.