জনতার অভ্যর্থনা গ্রহণ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল চিত্র।
বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা প্রয়াস’ স্লোগান বদলে নতুন স্লোগানকে সামনে রেখে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির (BJP) নতুন স্লোগান ‘স্বপ্নে নেহি হকিকত বনতে হ্যায়, ইস লিয়ে তো সব মোদি কো চুনতে হ্যায়।’ অর্থাৎ মোদির কথা বাস্তবে প্রতিফলিত হয় বলেই মানুষ তাঁকে বারে বারে নির্বাচিত করেন।
এছাড়াও মোদির গ্যারান্টি তো আছেই। দলের পদাধিকারী বৈঠকে আগামী লোকসভা ভোটের প্রচারের অভিমুখ বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। এছাড়াও বর্তমান সাংসদদের ভবিষ্যত ‘নমো অ্যাপে’র ওপর নির্ভর করছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে জনমত সমীক্ষা করে দলের সাংসদের ‘পারফরমেন্স’ যাচাই করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। তার ওপরেই অনেকটাই নির্ভর করছে সাংসদদের কপালে দলের টিকিট জুটবে না কি কপাল পুড়বে। বাংলার সাত থেকে আটজন সাংসদের নামের পাশে লাল কালির দাগ পরার প্রবল সম্ভবনা তৈরি হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
দেশজুড়ে হিন্দুত্বের হাওয়া তোলার পাশাপাশি মোদিই যে নির্বাচনে গেরুয়া শিবরের মুখ তা পদাধিকারী বৈঠকে আরও একবার জানিয়ে দিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সেইসঙ্গে দুটি বিষয়কে বিজেপির প্রচারে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, মোদি সরকারের দশ বছরের কাজের খতিয়ান নিয়ে লাগাতার প্রচার চালাতে হবে। বলতে হবে, মানুষ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। কাউকে বঞ্চনা করা হয়নি। সরকার সব কা সাথ। এই ঘোষণা কাজের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে। বিজেপি সরকারের কথা ও কাজে ফারাক নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুবিধাভোগীদের কথা প্রতিদিন প্রচার করতে হবে সব নেতা ও সাংসদকে। সরকার গরিব, যুব, মহিলা ও কৃষকের স্বার্থে কাজ করেছে এবং করে যাবে, এই বিষয়টি বেশি করে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাহলে কি বিজেপি হিন্দুত্বের কথা প্রচারে সেভাবে আনবে না? দলের জাতীয় কর্মসমিতির এক সদস্য বলেন, হিন্দুত্ব অবশ্যই থাকবে। ওটাই বিজেপির রাজনীতির মূল স্তম্ভ ও মন্ত্র। আমরা মনে করি হিন্দুত্বের পথই মোদি সরকারের সাফল্যের প্রধান স্তম্ভ। প্রচারে সেই কথা থাকবে। তবে দল যেহেতু দশ বছর ক্ষমতায় তাই কাজের খতিয়ানই হবে প্রধান অস্ত্র। তারপর তো রামমন্দির আছেই।
মোদি ক্ষমতায় আসার পর পরই ‘নমো’ অ্যাপ তৈরি করেন। এর পরে এই অ্যাপকে জনপ্রিয় করে তুলতে দলীয় ভাবেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন বিজেপির দাবি অনুযায়ী, দলের সব নেতা-কর্মীর মোবাইলেই রয়েছে ‘নমো’ অ্যাপ। আর সেই অ্যাপের মাধ্যমেই দেশের সব সাংসদের কাজ ও জনপ্রিয়তা যাচাই করা হচ্ছে। বিজেপি শিবির সূত্রে খবর, এই ভোটাভুটির উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে পারে, আসন্ন নির্বাচনে পদ্ম প্রতীকে কারা লড়তে পারবেন এবং কারা বাদ পড়বেন। সেটা ঠিক হলে এই ভোট বিজেপির টিকিটে জয়ী সাংসদদের জন্য যেমন চিন্তার, তেমনই হারা আসনে কারা পদ্মের টিকিট পাবেন সেটাও নির্ভর করছে। ‘নমো’ অ্যাপে শুরু হয়েছে তারই সমীক্ষা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জন মন সমীক্ষা’। এ সবের পরেই সমীক্ষায় জানতে চাওয়া হচ্ছে লোকসভা আসনের নাম।
রাজ্য অনুসারে লোকসভা আসন জানালেই সেখানকার সাংসদদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হচ্ছে। ওই সাংসদ নিজের এলাকায় কতটা সময় দেন, তাঁকে নিয়মিত দেখা যায় কি না, এলাকার উন্নতিতে তাঁর ভূমিকা রয়েছে কি না এবং থাকলে কতটা আছে সবই প্রশ্নের মাধ্যমে জানা হচ্ছে। সর্বোপরি সাংসদকে নিয়ে ‘অখুশি’, ‘অল্প খুশি’ না কি ‘খুব খুশি’ সবই জানানো যাচ্ছে। প্রথম থেকে এই পর্যন্ত শুধু পছন্দের অপশনে টিক করলেই হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরেই রয়েছে একটি মোক্ষম প্রশ্ন।
সেখানে ওই লোকসভা এলাকার তিন জন জনপ্রিয় বিজেপি নেতার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। সেই তিনটি নাম লিখে দিতে হচ্ছে অ্যাপের নির্দিষ্ট জায়গায়। এটাই সব চেয়ে চিন্তার বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘কেউ কারও কাছের লোক হলেই যে টিকিট পাবেন না, তা স্পষ্ট এই সমীক্ষায়। সেখানে কর্মীরা কাকে সাংসদ হিসাবে চাইছেন সেটা জানানোর সুযোগ রয়েছে। ফলে এখন যিনি সাংসদ রয়েছেন, তাঁর পরিবর্তে কার নাম বেশি করে উঠে আসছে সেটাও অ্যাপ বলে দেবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.