সুব্রত বিশ্বাস: আয় না বাড়লে ব্যয় সংকোচের নীতি নেওয়ার রীতি বাতলেছিলেন চাণক্য। কিন্তু রেল (Indian Railways) সেই নীতি না মানায় ক্ষতির বহর ঠেকাতে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় পন্থা দেখছেন না রেল বিশেষজ্ঞরা। রেলের ৯৯.৫ শতাংশ আয় হয় পণ্য ও যাত্রীভাড়া থেকে। জানিয়েছেন, রেলের অবসরপ্রাপ্ত আইআরটিএস আধিকারিক কৌশিক মুখোপাধ্যায়। আবার মোট আয়ের ৯৫ শতাংশই পণ্য মাশুল থেকে আসে। ফলে সেদিকে হাত না দিয়ে আয়ের সমতা ফেরানো কঠিন বলে তিনি মনে করছেন। অন্যদিকে ক্যাটারিং, টিকেটিং, ক্লিনিং, বিজ্ঞাপন থেকে যাবতীয় আয়ের সূত্রগুলি অন্য এজেন্সিকে দিয়ে দিয়েছে। ফলে রেলের আয় ব্যাহত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
যদিও রেল মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ২.৪০ লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়েছে রেলের। এই আয় গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। টাকার পরিমাণে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। পণ্য পরিবহণ থেকে সর্বোচ্চ ১.৬২ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে যাত্রীভাড়া থেকে। ওই সূত্রে খবর, যাত্রীভাড়া থেকে ৬৩,৩০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। অন্যান্য বিষয় থেকে ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা আয় করেছে। একই সময়ে, বিবিধ রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ৮৪৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন, দোকান থেকে আয়।
রেল তথ্য দিয়ে আয়ের বাড়তি দিকে দেখালেও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় রেল সড়কপথ ও আকাশপথ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে রেল বলে মনে করেছেন পূর্ব রেলের প্রাক্তন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী। তিনি বলেন, স্বল্প দূরত্বের যাত্রাপথ মানুষ এখন সড়কপথে চলে যাচ্ছেন। ট্রেনে উঁচু ক্লাসের ভাড়া এতটাই যে আগে প্লেনের টিকিট কাটলে তার থেকে কম পড়ে। ফলে সেদিকে আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। পাশাপাশি ট্রেনে পরিষেবা ভাল না হওয়ায় অভিযোগের পাহাড় জমছে। ভাল খাবারের অভাব, শৌচালয় অপরিচ্ছন্ন, বেডরোল অপরিষ্কার, পরিষেবা নেই– সর্বোপরি ট্রেন অস্বাভাবিক লেট ও বাতিলের খপ্পরে পড়ে মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন ট্রেন থেকে। ফলে রেলের আয় কমেছে।
নানা ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে রেলের আয় বাড়ানো জরুরি বলে তিনি মনে করেন। আর এজন্য পণ্য মাশুল ক্রমান্বয়ে বাড়ানো উচিত। তবে ট্রেনে পণ্য পরিবহণও কমেছে। চুরির আশঙ্কা, ইয়ার্ড থেকে বাড়ি বা গোডাউনে পণ্য নিয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। সেদিক থেকে সড়ক পরিবহণে এই অসুবিধা নেই। তাই পণ্যও চলে যাচ্ছে সড়কপথে। নানা অভাববোধের মধ্যে এখন পড়ে রয়েছে রেল। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আশু মাশুল বৃদ্ধির প্রয়োজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.