Advertisement
Advertisement
Kargil

যুদ্ধ হলে লড়তে প্রস্তুত দ্রাস, কারগিলের সাহসী বাসিন্দারা

পহেলগাঁও হামলার পর ফের একবার দেশজুড়ে উঠেছে যুদ্ধের জিগির।

Residents of Drass, Kargil ready to fight if war breaks out
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:May 1, 2025 3:43 pm
  • Updated:May 1, 2025 3:43 pm  

সোমনাথ রায়, কারগিল: দোবারা হিম্মত মত কর না…। গত বছরের ২৫ জুলাই। কারগিল বিজয় দিবসের রজতজয়ন্তী পূর্তির ঠিক আগের দিন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে এগারো হাজার ফুট উঁচুতে দ্রাসের লামোচেন ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য হুঙ্কার দিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালের ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বেদ প্রকাশ মালিক। মুখে ছিল পড়শি দেশের জন্য তাচ্ছিল্যের হাসি। সেই হিম্মত অবশ্য এখনও দেখায়নি পাকিস্তান। যদিও মাঝেমধ্যেই ভারতের শান্তি নষ্টের অপচেষ্টা কিছুতেই বন্ধ করছে না তারা। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর আরও একবার দেশজুড়ে উঠেছে যুদ্ধের জিগির। এই আবহে কী বলছে কারগিল, সেই উত্তর খুঁজতেই চলে আসা শেষ ভারত-পাক যুদ্ধের গ্রাউন্ড জিরোতে।

‘মিশন কারগিল’-এর প্রথম গন্তব্য লামোচেন ভিউ পয়েন্ট। উল্টোদিকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে টাইগার হিল, তোলোলিং, বাত্রা পয়েন্ট, থ্রি পিম্পলের মতো দ্রাস, কারগিল, বাটালিক সেক্টরের বিভিন্ন টপ। অটল পাহাড়গুলো চুপ থেকেও যেন সিনা তানকে ২৬ বছর আগের জয়গাথার বর্ণনা দিচ্ছে। মূক পর্বতমালার শৃঙ্গের উপরের সাদা রং হয়তো দুনিয়াকে ভারতের শান্তির প্রতীকের গাথাই বর্ণনা করছে। যদিও প্রতিবেশি মুলুক সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আপাতত সেই শান্তির পথ থেকে কিছুটা সরে আসতে চাইছে দিল্লি।

Advertisement

সেবার ভেড়া চড়াতে পাহাড়ে গিয়ে প্রথম ভারতীয় ভূখণ্ডে পাক সেনার খোঁজ পেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত নায়েক মহম্মদ ইউসুফ লোনের ছেলে, ভাইপো ও ভাগ্নে। কারগিল যুদ্ধের বীরগাথায় তাঁর নামও রয়েছে উজ্জ্বল ভাবে। পাহাড়ি গ্রামের বাড়ির দাওয়ায় বসে বলছিলেন, “এই বয়সেও আমি সেনার সঙ্গে যেতে তৈরি। তবে আর যুদ্ধ হবে বলে আমার মনে হয় না। এখন আমাদের সেনা অনেক বেশি সতর্ক। অনেক বেশি আধুনিক পরিকাঠামো ও রণসজ্জা আমাদের কাছে থাকায়, ওরাও (পাকিস্তান) আর ঝুঁকি নেবে বলে মনে হয় না।” একইসঙ্গে বললেন, “তবে আমি তো বলব পাকিস্তানে ঢুকে একদম আর-পারের লড়াই করে ওদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। তবেই কিছুদিন ঠান্ডা থাকবে।”

যদিও এই যুদ্ধ প্রসঙ্গে কিছুটা ভিন্ন সুর শোনালেন কারগিল বাজারে এক চায়ের দোকানে বসে থাকা তিন বৃদ্ধ। গুলাম মাসুদ, নিয়াজ আহমেদ, জাহিদ ভটরা যেন সেই ঘটনা এখনও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন। বলছিলেন, “কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কত মানুষ মারা গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পহেলগাঁওতে যা হয়েছে, তা ক্ষমা অযোগ্য অন্যায়। কিন্তু যুদ্ধ হওয়া ঠিক নয়। সেই তো আবার কতগুলো নির্দোষ মানুষের প্রাণ যাবে।” ইতিহাস বলছে যখনই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছে, তখনই ভারতীয় সেনাকে সাহায্য করতে প্রাণপাত করে দিয়েছে দ্রাস ও কারগিল। এবারও তার জন্য প্রস্তুত গোটা এলাকা।

মহম্মদ ইউসুফ লোনের মতোই সেই কথা বললেন, উঁচু পাহাড়ের ভিতর এক গণ্ড গ্রামের দিনমজুর ফৈয়জ আহমেদ। সেবারও সেনাকে সাহায্য করতে পিঠে বোঝা নিয়ে পাহাড়ে উঠেছিলেন ২৫ বছরের ফৈয়জ। সময়ের নিয়মে বয়স এখন প্রায় দ্বিগুণ। তবু যেন ঘাটতি নেই দেশভক্তিতে। বলছিলেন, “পথের বরফ পরিস্কার করা-সহ সেনার কাজ করেই চলে রুটি রুজি। ওদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। ইতিহাসের পাতা খুলে দেখে নিন। ১৯৪৭, ১৯৬৫ বা ১৯৯৯। আমরা সবসময় সেনার সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।”

১৯৯৯ সালের মে মাসের কোনও এক বৃহস্পতিবার। ঘড়িতে তখন বেলা পৌনে এগারোটা। শ্রীনগর-লেহ হাইওয়ের ধারে নিজের দর্জির দোকানে বসে কাজ করছিলেন মহম্মদ আকবর পণ্ডিত। শুরু হয় গোলাগুলি। নিজেই নিয়ে গেলেন এমন কিছু জায়গায়, যেখানে আজও স্পষ্ট পাক গোলাবর্ষণের ছবি। হাইওয়ের ধারের পাঁচিল, পথের ধারে ল্যাম্পপোস্টের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ এখনও যেন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেদিনের ইতিহাস। বললেন, “ভারত আমাদের দেশ। তাঁকে বাঁচাতে যা কিছু করতে প্রস্তুত আমরা। যদি সত্যি সত্যি ফের যুদ্ধ। হয়, ‘৯৯-এর মত এবারও দ্রাস, কারগিলের লোকরা জান লড়িয়ে দেবে।” যুদ্ধ হবে কি হবে না, উত্তর দেবে সময়। তবে দ্রাস থেকে কারগিল প্রায় ১০০ কিলোমিটার ঘুরে যা বোঝা গেল, যে কোনও সঙ্কটের মুহূর্তে দেশ, সেনার পাশে থাকতে প্রস্তুত এই এলাকার মানুষ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement