প্রতীকী ছবি।
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চিন সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে উত্তর সিকিমে দুই লেনের জাতীয় সড়ক এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা ভারত সরকারের। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ সিকিমের সাংসদ ইন্দ্রা হাং সুব্বাকে চিঠি লিখে জাতীয় সড়ক নির্মাণের কথা জানিয়েছেন। ওই সড়ক তৈরি হলে একদিকে যেমন চিন সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হবে। অন্যদিকে পর্যটকদের লাচেন, লাচুং এবং ইয়ুমথাংয়ে যাতায়াত সহজ হবে। এদিকে জোরেথাম এবং লেগশিপের মধ্যে দিয়ে মেল্লি এবং ডেন্টামকে জুড়তে তৎপর হয়েছে রেল। প্রকল্পের সমীক্ষা চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিকিমের পশ্চিম ও দক্ষিণ ভাগেও পৌঁছে যাবে ট্রেন।
সম্প্রতি সাংসদকে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, উত্তর সিকিমে ৩১০-এ এবং জাতীয় সড়ক ৩১০-এজি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভূমিধস প্রবণ হওয়ায় দুটি জাতীয় সড়কে নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করা, ঢাল ঠিক করা এবং রাস্তা শক্তিশালী করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন প্ল্যান্ট এবং সরঞ্জাম মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে লোনার্ক হিমবাহ হ্রদের বিপর্যয়ে হড়পা বানের ধাক্কায় উত্তর সিকিম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়। লাচেন, লাচুং এবং ইয়ুমথাংয়ের মতো পর্যটন কেন্দ্রের সেতুগুলি ভেসে যায়। লাচুংয়ে ১৫০টি হোটেল এবং লাচেনে আরও ১৩০টি হোটেল রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হড়পা বানের বিপর্যয়ের পর এই হোটেলগুলির মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পর্যটক না আসায় অনেকেই এক বছরেরও বেশি সময় তাদের ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
সম্প্রতি পর্যটকরা আবার ওই অঞ্চলে ভ্রমণ শুরু করেছেন। ভারত-চিন সীমান্ত সংলগ্ন সিকিমের এই উত্তরাঞ্চলে শীতকালে যখন তুষারপাত হয় প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে। সাংসদ তাঁর সমাজ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে জানান, গত মার্চ মাসে তিনি প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। তার অনুরোধে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ সাড়া দিয়ে চিঠিতে জানিয়েছেন, উত্তর সিকিমে মজবুত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতিমধ্যে ৩১০-এ এবং জাতীয় সড়ক ৩১০-এজি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়ক দুটি দুই লেনের হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) ওই নির্মাণ কাজ করবে।
এদিকে উত্তর সিকিমে জাতীয় সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি সিকিমের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ রেলপথে জুড়তে উদ্যোগী হয়েছে রেল মন্ত্রক। নয়া রেললাইন প্রকল্পের ‘ফাইনাল লোকেশন সার্ভে’-র সবুজসংকেত মিলেছে। জোরেথাম এবং লেগশিপের মধ্যে দিয়ে মেল্লি এবং ডেন্টামকে যুক্ত করবে ওই রেলপথ। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিকিমের পশ্চিম ও দক্ষিণ ভাগেও পৌঁছে যাবে ট্রেন। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সমীক্ষার কাজ করবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেজন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। মেল্লি-ডেন্টাম রেললাইনের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই পথে ভারত-নেপাল সীমান্তের কাছে পৌঁছনো যাবে ট্রেনে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেবক-রংপো রেললাইনের কাজ শেষ হবে। ৪৪.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রেললাইন চালু হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে যোগাযোগ ব্যবস্থা মজবুত হবে। ট্রেনে পৌঁছনো যাবে সিকিমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.