শুভজিত মণ্ডল: লোকসভার আগে ৫ রাজ্যের ফলাফলের দিকে নজর ছিল গোটা দেশের। আর পাঁচ রাজ্যের রায় যে বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত দিচ্ছে তা বলতে হলে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিজেদের দখলে থাকা ৩টি রাজ্য হারাতে বসেছে গেরুয়া শিবির। সেই সঙ্গে তেলেঙ্গানা তথা মিজোরামেও দাঁত বসাতে পারেনি। কিন্তু এসবের পাশাপাশি আরও কিছু ফ্যাক্টর চিন্তায় রাখবে গেরুয়া শিবিরকে।
১. গোবলয়ে শক্তিক্ষয়: হিন্দিবলয়ের তিনটি রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এমনকী যখন কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল তখনও নিজেদের এই দুর্গ অটুট রেখেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু এবারে সেই চেনা দুর্গও হতাশ করল বিজেপিকে। নিজেদের ট্র্যাডিশনাল ঘাঁটি হারানো মোদি-অমিত শাহদের চিন্তায় রাখবেই।
২. গ্রামীণ ভারতে কংগ্রেসের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত: মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়। প্রকৃত গ্রামীণ ভারত বলতে যা বোঝায় এই তিন রাজ্য তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিন রাজ্যের ফলে স্পষ্ট গ্রামীণ ভারতে বিজেপিকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত কংগ্রেস। মূলত কৃষক অসন্তোষকে হাতিয়ার করে তিন রাজ্যেই প্রচারে নেমেছিলেন রাহুল। রাজস্থান কৃষকদের ভোটে বামেরা কিছুটা ভাগ বসালেও অন্য রাজ্যগুলিতে গ্রামীণ ভোটব্যাংক কংগ্রেসেরই দখলে গিয়েছে।
৩. মোদি মিথের অবসান! গুজরাট নির্বাচনে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জিতে গিয়েছিল বিজেপি, কর্ণাটকে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপি। এসবের পিছনে ছিল শেষ মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির প্রচার। কার্যত ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় ডুবন্ত নৌকা থেকে দলকে টেনে তোলেন মোদি। কিন্তু গোবলয়ের তিন রাজ্যে মোদি ক্যারিশমাও বাঁচাতে পারল না বিজেপিকে। বিরোধীরা বলছে, ভারতের রাজনীতিতে মোদিই শেষ কথা, এই মিথটার অবসান ঘটল।
৪. নেতা রাহুল: তখনও রাফালে ইস্যু দানা বাঁধেনি, তখনও কংগ্রেস আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। কিন্তু তখন কার্যত একার হাতে এই ইস্যুগুলি নিয়ে লড়াই করেছেন রাহুল। সীমিত শক্তি নিয়েও চেষ্টা করেছেন বিজেপিকে কোণঠাসা করার, অনেক সময় অন্য বিরোধীরাও সমর্থন করেনি। কংগ্রেসের হিন্দু-বিরোধী ভাবমূর্তি বদলে নরম হিন্দুত্বের পন্থা নিয়েছেন, যা বেশ সমালোচিতও। কিন্তু বলতেই হবে রাহুলের এই অবস্থান বদল কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দিচ্ছে। এর আগে একাধিক উপনির্বাচনেও দেখা গিয়েছে সেই সাফল্যের প্রমাণ। সভাপতি হিসেবে প্রথম বড় পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ রাহুল। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস সভাপতিকে অনেকেই মোদির বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।
৫. বিজেপি মুক্ত দক্ষিণ ভারত: এবারের নির্বাচনে মূলত গোবলয়ের তিন রাজ্যের দিকে গোটা দেশের নজর থাকলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তেলেঙ্গানার নির্বাচন। তেলেঙ্গানার ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, টিডিপি-কংগ্রেসের অনৈতিক জোট মানুষ মেনে নিচ্ছেন না। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হয়ে গেল দক্ষিণ ভারতে এখনও দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবির। কর্ণাটকে ক্ষমতা হারানোর পর তেলেঙ্গানায় দাগ কাটতে প্রাণপন চেষ্টা করেছিলেন মোদি-অমিত শাহরা। কিন্তু বিজেপির দুই শীর্ষ নেতাকে ফিরতে হল কার্যত শূন্য হাতে। সেই সঙ্গে আরও একবার প্রমাণিত হল, দক্ষিণ ভারতে এখনও নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে পারেনি বিজেপি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.