সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই সমস্ত প্রতিকূলতা দূরে ঠেলে নিরলস কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এমন ভাবনা থেকেই তামিলনাড়ুর একটি কাপড়ের কারখানার কর্মী সুধা ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা দূর করতে ওষুধ খেতেন। তবে চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে নয়, কারখানার সুপারভাইজারের কাছ থেকেই ওষুধ পেতেন। শরীরে ব্যথা বাসা না বাঁধলে টানা দশ ঘণ্টা কাজ করতেও সমস্যা হয় না। কিন্তু সুধা জানতেন না দিনের পর দিন ওই ওষুধ তাঁর শরীরের ঠিক কতটা ক্ষতি করছে। জানতেই পারেননি, সুপারভাইজার তাঁকে সুস্থ রাখার অছিলায় শুধুমাত্র নিজের কার্যসিদ্ধি করেছেন।
বছর ঘুরতেই ঋতুস্রাব জনিত সমস্যায় পড়েন সুধা। তবে তিনি একা নন, খবর নিয়ে দেখা যায় কারখানার একশোরও বেশি মহিলা একই সমস্যায় পড়েছেন। যাঁরাই সুপারভাইজারের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়েছেন, তাঁরাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কারণ, লেবেলহীন যন্ত্রণা প্রতিরোধক ট্যাবলেট তাঁদের হাতে তুলে দিতেন ওই সুপারভাইজার। গোটা বিষয়টি প্রশাসনের কানে পৌঁছতেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দপ্তর। কাপড়ের কারখানার কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানানো হয়। মহিলা কর্মীদের অনেকে জানাচ্ছেন, এই ট্যাবলেট যে তাঁদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে, তা টেরই পাননি তাঁরা। এমনকী, ওষুধের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, সে বিষয়েও কখনও সতর্ক করা হয়নি। শুধু ঋতুস্রাব জনিত সমস্যাই নয়, প্রসব যন্ত্রণা, গর্ভপাত, হতাশা, উত্তেজনার মতো নানা শারীরিক রোগের শিকার হয়েছেন তাঁরা।
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন মহিলাদের থেকে সেই ওষুধ নিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখেছে। তারা জানিয়েছে, কোনও ওষুধেই কোনও ব্র্যান্ডের লেবেল লাগানো থাকত না। এমনকী ওষুধের মেয়াদও উল্লেখ থাকত না তাতে।
সুধার শারীরিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায়, তাতে চিকিৎসকরা তাঁকে কাজে বিরতি নিয়ে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মাথার উপর ঋণের বোঝা। তাই কাজ বন্ধ করার উপায় নেই। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে কর্মীদের অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর জন্য ওই কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, কর্মীদের বাকি সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হত কি না। এমন ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। কর্মীদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণের জন্য কারখানার মালিককেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.