সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্যুইচবোর্ডে বাসা বেঁধেছে পাখি। সেই ডিম ও পক্ষীশাবকদের বাঁচাতে ৩৫ দিন আন্ধকারেই থাকল গোটা গ্রাম। কেউই জ্বালালেন না ঘরের আলো। পাছে, ওই ছোট্ট প্রাণগুলো নষ্ট হয়ে যায়!
হাতিকে বাজি ভরতি ফল খাইয়ে হত্যা করা, কুকুরকে পেরেক-সুদ্ধু খাবার খাওয়ানো, গরুকে বিস্ফোরকযুক্ত খাবার খাওয়ানোর মতো এযাবৎকাল একাধিক নারকীয় ঘটনার জন্য মনুষ্য জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। ধিক্কার, কী অমানবিক! এমন নানা শব্দই বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। তবে এবার কিন্তু একেবারে তার উলটো ঘটনাটাই ঘটল তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটি গ্রামে। স্যুইচবোর্ডের উপর বাসা বাঁধা পাখি এবং তার ছানাদের বাঁচাতে গোটা গ্রাম একমাসেরও বেশি পুরোপুরি অন্ধকারেই ডুবে থাকল।
তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলায় ঘটনাটি ঘটে লকডাউনের মাঝেই। গ্রামের মেইন স্যুইচবোর্ডের উপরে বাসা বাঁধে পাখিটি। ঘটনাটি প্রথমে চোখে পড়ে পাশের বাড়ির কারুপ্পুরাজা নামে এক কলেজ পড়ুয়ার। সেই সবাইকে জানায় ঘটনাটি। এরপর গ্রামবাসীরা প্রায় সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, পাখির ডিম থেকে ছানা ফুটে বের না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রামে আলো জ্বালানো হবে না। করলেনও তাই। পক্ষীশাবকদের বাঁচাতে এই ভরা বর্ষার মধ্যেও পিছল রাস্তা দিয়ে অন্ধকারে চলাফেরা করলেন গোটা গ্রামের লোকজন।
গ্রামে মোট ১০০টি পরিবারের বাস। সবাই অবশ্য একবাক্যেই রাজি হননি প্রথমটায়। ধাপে ধাপে বোঝাতে হয়েছে সবাইকে। কারণ, সামান্য পাখির বাসার জন্য এতদিন অন্ধকারে চলাচল করতে রাজি হচ্ছিলেন না তাঁরা। কিন্তু গ্রামের যুবক-যুবতীরা তাঁদের অনুরোধ করেন। বাসা ও ডিমের বেশ কিছু ছবি তুলে কারুপ্পুরাজা স্থানীয় কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঘটনাটি বিস্তারিত লিখে পাঠিয়ে দেন। ধীরে ধীরে জনমত গড়ে ওঠে। মূতি ও কার্তি নামে ২ ভাইয়ের উপর দায়িত্ব ছিল পাখির বাসা দেখাশোনা করার। রোজ মা পাখি উড়ে গেলে একবার করে দেখে আসত তাঁরা যে ডিমগুলি কী অবস্থায় রয়েছে! এর পর একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। গ্রামবাসীরা ঠিক এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
ওই কলেজ পড়ুয়া যুবক জানিয়েছেন, গ্রামে মোট ৩৫টি স্ট্রিটলাইট রয়েছে। কিন্তু তাঁরা ৩৫দিন একটিও জ্বালাননি। কারণ সব সুইচ ওই কমিউনিটি স্যুইচবোর্ডে। মোবাইলের টর্চ, টর্চ লাইট ব্যবহার করেই গ্রামবাসীরা এই ক’দিন রাস্তায় যাতায়াত করেছেন শুধুমাত্র পাখির বাঁচানোর জন্য, মানবিকতার খাতিরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.