সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধুমাত্র বাংলা নয়। গত কয়েক বছরে দেশের একাধিক রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল হয়েছে। অতীতের বামশাসিত ত্রিপুরা থেকে শুরু করে বর্তমানে বিজেপিশাসিত হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ – রাজ্যে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির নজির তৈরি হয়েছে। কোথাও আমলা ও প্রশাসনিক স্তরে, কোথাও প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগসাজশে এই ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি, দুর্নীতির দায়ে জেল খাটতে হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে সেই সমস্ত কেলেঙ্কারি।
ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট জমানায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আমলে ২০১০ এবং ২০১৩ সালে দু’দফায় স্কুলশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক পদে ১০,৩২৩ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয় ত্রিপুরা হাই কোর্টে। গোটা প্যানেল বাতিল করেছিল উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ত্রিপুরা সরকার। সেখানে ত্রিপুরা সরকারের তরফে কেন প্যানেল বাতিল করা উচিত নয়, সওয়াল করেছিলেন বামপন্থী আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। কিন্তু ২০১৭ সালে পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশই বহাল রাখে শীর্ষ আদালতও। ঘটনাচক্রে পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে পুরো প্যানেল বাতিলের জন্য সওয়াল করেছেন সেই তিনিই। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ত্রিপুরার উলটো ভূমিকায়।
পশ্চিমবঙ্গের মতো টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার ঘটনা দেশের অনেক রাজ্যেই আছে। তার মধ্যে সাড়া ফেলে দেওয়া ঘটনা হরিয়ানার। ২০০০ সালের। সেখানে শিক্ষক দুর্নীতির মামলায় জেল হয় তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালার। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের বরখাস্ত করার রায় দেয় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। আদালত নিয়ম ভেঙ্গে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ফেরত দিতে বলে। পরে শীর্ষ আদালত বরখাস্ত শিক্ষকদের চাকরি বহাল রাখে। যদিও মামলাটি এখনও চলছে। নিষ্পত্তি হয়নি।
আবার উত্তরপ্রদেশে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৬৯ হাজার জনের যে মেধাতালিকা তৈরি হয়েছিল, গত বছর তা খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। তালিকা তৈরিতে সংরক্ষণের নিয়ম না মেনে কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। বহুদিন ধরেই তা নিয়ে মামলা বকেয়া ছিল হাই কোর্টে। তবে সব দুর্নীতি ছাপিয়ে গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারি। একটিই সরকারি সংস্থা চাকরি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেলের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। হিন্দিতে সেই সংস্থার নাম হল ব্যবহারিক পরীক্ষা মণ্ডল। যার সংক্ষিপ্ত নাম ব্যাপম। সেই সংস্থার নিয়োগ এবং অন্যান্য দুর্নীতির জাল বিস্তৃত ছিল রাজ্যের কোণে কোণে। তদন্তে দেখা যায়, বিজেপির মন্ত্রী, নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, আমলা, সরকার ঘনিষ্ঠ বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রী, কেউই বাদ নেই। টাকার বিনিময়ে দেদার বিক্রি হয়েছে চাকরি। সেই তদন্ত এখনও চলছে। জেলে আছে শতাধিক অপরাধী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.