সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লকডাউনে সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে নজির গড়লেন হায়দরাবাদের এক মহিলা। লকডাউনের জেরে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে সন্তান আটকে থাকায় বাধ ভাঙলেন রাজিয়া বেগম। টানা তিনদিন স্কুটি চালিয়ে ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন তিনি।
দেশজোড়া লকডাউনে ঘরবন্দি বহু মানুষ। তবে নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে সন্তানের টানে ১৪০০ কিলোমিটার পথ একটানা স্কুটি চালিয়ে গেলেন রাজিয়া বেগম। ভাষা ভিন্ন হতেই পারে, তবে আবেগ নয়। আম্মি হোক মা, যে ভাষাতেই তাঁকে ডাকা হোক না কেন সন্তানের যে কোনও সমস্যার সমাধান মেলে মায়ের কাছেই। অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে আটকে পড়েছিল রাজিয়া বেগমের ছোট ছেলে। লকডাউনের জেরে গণপরিবহন স্তব্ধ থাকলেও বাস বা ট্রামের জন্য অপেক্ষা করেননি তিনি। নিজামাবাদের একটি সরকারি স্কুলের অধ্যক্ষা রাজিয়া স্থানীয় প্রশাসনের থেকে অনুমতি নিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে অকুতোভয়ে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। বুধবার রাতে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। বছর ৪৮-এর রাজিয়া বেগমের কথায়, “এটা আমার কাছে খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এমতাবস্থায় ভিন রাজ্যে সন্তানকে তো ছেড়ে দিতে পারি না। তাই স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে অনুমতি নিয়ে স্কুটি নিয়েই বেরিয়ে যাই। পথে খাবারের জন্য বাড়ি থেকে কয়েকটা রুটি বানিয়ে নিই। তবে রাতের ফাঁকা রাস্তা দেখে সত্যিই খুব ভয় করেছিল।”
জানা যায়, মার্চ মাসের ১২ তারিখে এক বন্ধুকে পৌঁছে দিতে নেল্লোরের রহমতাবাদ যান রাজিয়া বেগমের ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। শুরু হয় লকডাউন। ফলে নেল্লোরেই আটকে পড়েন নিজামুদ্দিন। কিন্তু এতগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি পরিস্থিতি, বরং আরও খারাপ হয়। ফলে বাড়ি ফিরতে চেয়ে মাকে ফোন করে নিজামুদ্দিন বলে যেভাবে হোক, বাড়ি ফিরতে চায় সে। ছেলের আর্তি শুনে রাজিয়া ঠিক করেন, ছেলেকে ফিরিয়ে আনবেন তিনি। তাই পুলিশের অনুমতি নিয়েই সোমবার সকালে শুরু হয় তাঁর যাত্রা। ছেলেকে নিয়ে যখন ফেরেন, তখন বুধবার সন্ধে। বছর ১৫ আগে স্বামীকে হারিয়ে রাজিয়ার কাছে সম্বল তাঁর দুই সন্তান। তাঁর বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে কিছুদিন আগে। আর ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন ডাক্তারি প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজিয়া জানান, “প্রথমে ভেবেছিলেন মোটরবাইক নিয়ে বড় ছেলেকে পাঠাবেন নিজামুদ্দিনকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তাকে দেখে পুলিশের সন্দেহ হতে পারে, তাই সাহস পাইনি। তাই নিজেই দায়িত্ব নিই।” করোনা সংক্রমণের আতঙ্কের আবহে বাজিয়া বেগমের এই প্রয়াস প্রশংসা কুড়োয় সকলের কাছ থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.