নন্দিতা রায়, ভিড়োসা (মধ্যপ্রদেশ): সাংবাদিক শুনে বেশ যত্ন করেই খাটিয়া পেতে বাড়ির উঠোনে বসতে দিয়েছিলেন। খানিক পরেই যে মুখঝামটা খেতে হবে, আন্দাজ করতে পারিনি। অপরাধ, পান সিং তোমরকে ডাকাত বলা। আর তাতেই চটে লাল ভাইঝি গীতা। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন, “ডাকু কিঁউ বোল রহে হো। চাচাজি বাগী থে বাগী।” বছর পঞ্চাশেক বয়স। চার সন্তানের জননী গীতা নিজের কাকা পান সিংকে ডাকাত বলে মানতেই রাজি নন।
[ চম্বলের ডাকাতরা এখন বালি মাফিয়া, সব জেনেও চুপ প্রশাসন]
গোয়ালিয়র থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরের মোরেনা পার করে সরষে খেতের মাঝখান দিয়ে কালো পিচঢালা রাস্তায় আরও চল্লিশ কিলোমিটার যাওয়ার পর ভিড়োসা। পান সিং তোমরের গ্রাম। চম্বলের বিখ্যাত বেহড়ের অংশ। অবশ্য তার অধিকাংশই এখন চাষের জমি। গীতা জানালেন, কাকার পরিবারের কেউ এখানে থাকে না। ববীনাতে থাকে। এই অঞ্চলে তো আর ডাকাতের সমস্যা নেই? প্রশ্ন শুনতেই আবার রূঢ় জবাব গীতার, “আপনি বার বার ডাকাত বলছেন কেন? বাগী বলুন। আর এখনকার কারও মধ্যে বাগী হওয়ার দম আছে যে বাগী হবে! আপনি গ্রামের বয়স্কদের কাছে যান। দেখুন তাঁরা কী বলেন, যাঁরা পান সিংকে চিনতেন। একটু এগিয়ে গেলেই আসন নদী দেখতে পাবেন। নদীর ধারে আমার কাকার তৈরি করে দেওয়া মনসা মন্দির আজও আছে। গ্রামের তো একটাই মন্দির।”
কাকা কেন বাগী হতে বাধ্য হয়েছিলেন সেই গল্পও এক নিঃশ্বাসে শুনিয়ে দিলেন গীতা। অবশ্য পান সিং সিনেমার দৌলতে যা এখন অনেকেরই জানা। চম্বল এলাকার ত্রাস ছিলেন পান সিং। ১৯৮১ সালে পুলিশের হাতে মারা যাওয়ার আগে তাঁর মাথার উপর সেই সময়ে দেড় লক্ষ টাকা পুরস্কার ছিল। প্রথম জীবনে সেনার সুবেদার পান সিং জাতীয়, আন্তর্জাতিকস্তরের ক্রীড়াবিদও ছিলেন। পরবর্তীকালে নিজের গ্রামে জমি বিবাদের জেরে ‘বাগী’ হন। জাতিতে রাজপুত ঠাকুর বলে পান সিংয়ের প্রচণ্ড জাত্যভিমান ছিল বলেও শোনা যায়। পুলিশের গুলি খাওয়ার পর জল চেয়েছিলেন কোনও রাজপুতের হাত থেকেই। সে সব গল্পই গীতা শুনিয়ে দিলেন। লোকের কাছে ভিড়োসার পরিচিতি যে পান সিংয়ের জন্যই, সেটাও জানাতে ভুললেন না।
[‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’কে পিছনে ফেলে এবার উচ্চতম রাম মূর্তি অযোধ্যায়]
পান সিং মারা যাওয়ার পর সাঁইত্রিশ বছর কেটে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্রামের মানুষ পান সিংকে ভোলেনি। গাছতলায় বয়স্কদের আসরে বসে থাকা বছর সত্তরের গজেন্দ্র সিং জানালেন, “লোকে কী করে ভুলবে বলুন। গ্রামের ভাল করেছিল। জমি বিবাদ নিয়েই বাগী হয়েছিল। নিজের জমি কেউ জবরদখল করলে কে মেনে নেবে। এখনও আবার সেই রকমই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। দেখেছেন তো বেহড় সাফ করে চাষের জমি তৈরি হয়েছে। সেগুলোর মালিকানা নিয়েও বিবাদ চলছে। আবার পান সিংয়ের মত ‘বাগী’ না তৈরি হয়। চম্বলের মাটিতে বাগী হওয়ার হাওয়া আছে।” বস্তুত, তবে যে জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে পান সিং ডাকাত হয়েছিলেন, সেই জমির দখল এখনও তাঁর শত্রুদের হাতেই রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.