কপ্টারে চেপে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছলেন কর্মীরা ছবি: অমিতলাল সিংদেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাও উপদ্রুত এলাকায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে ল্যান্ডমাইন আতঙ্ক। তাই ঝাড়খণ্ডের দুর্গম এলাকায় ভোট কর্মীদেরকে মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে বুথে পৌঁছে দেওয়া হল।
ঝাড়খণ্ডে দুটি ধাপে ভোট হচ্ছে। বুধবার ৪৩টি ও ২০ নভেম্বর ৩৮টি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে। এদিন মাওবাদী উপদ্রুত ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খঁরসোওয়া জেলার দুর্গম এলাকায় ভোট কর্মীদেরকে হেলিকপ্টারে বুথে পৌঁছে দেওয়া হয়। কাঁচা রাস্তায় যাতে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিছানো না থাকে সেই কথা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ। এছাড়া এই উপদ্রুত এলাকায় হেলিকপ্টারে করে নজরদারিও চালাচ্ছে কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ঝাড়খণ্ড পুলিশ মিলিয়ে লং রুট পেট্রলিং-র পাশাপাশি এরিয়া ডমিনেশন চলছে। এছাড়া মাওবাদী দমনে অভিযানও চলছে। এই অভিযানে পড়শি রাজ্য বাংলার সাহায্য নিচ্ছেন তারা। সমগ্র ঝাড়খন্ড জুড়ে মাওবাদীদের একাধিক স্কোয়াড রয়েছে। সারান্ডার জঙ্গল এলাকায় রয়েছে অনল, আকাশ, মিসির বেশরার মতো কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
পুরুলিয়া ছুঁয়ে মোট ৩৭০ কিমি ঝাড়খণ্ড সীমানা। তার মধ্যে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা রয়েছে বান্দোয়ান, বলরামপুর ছুঁয়ে থাকা পূর্ব সিংভূম ও সরাইকেলা-খঁরসোওয়া জেলায়। ওই এলাকায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে নিয়েই মাও দমনে অভিযান চলছে। ঝাড়খণ্ডের ওই জেলার পুলিশ সুপার আশুতোষ শেখর বলেন, “মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় ভোট কর্মীদেরকে হেলিকপ্টারে করে বুথে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযানের পাশাপাশি কড়া নজরদারি রয়েছে। যাতে অবাধে ভোটাররা বুথে পা রেখে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন।” প্রথম দফার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পার করতে মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে কমিশন।
পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমানায় ২৪ ঘন্টা নাকা চলছে। এছাড়া দুই রাজ্যের ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এমন স্ট্র্যাটেজিক কয়েকটি পয়েন্টে চলছে সারপ্রাইজ নাকা। অর্থাৎ সীমানায় পুরুলিয়ার একাংশের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের অংশেও চলছে নাকা তল্লাশি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সীমানা এলাকায় ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে মাও দমনে অভিযানের পাশাপাশি একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ” ওই সীমানায় চলছে ইনটেনসিভ বর্ডার পেট্রলিং। সেইসঙ্গে সিসিটিভিতেও চোখ রেখে চলছে নজরদারি। বাংলা-ঝাড়খন্ড সীমানায় মোবাইল শ্যাডো জোনে নিরন্তর ওয়াকিটকিতে যোগাযোগ চলছে বাংলা- ঝাড়খন্ড পুলিশের। বাংলা থেকে যাতে কোনওভাবেই ঝাড়খণ্ডে কোনও কিছু পাচার না হয় সে বিষয়টিও নজরদারিতে রয়েছে। সীমানায় মদের দোকানগুলিতেও চোখ রেখেছে পুলিশ।
ঝাড়খণ্ডের ২৪ টি জেলায় মোট ৮১ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি সাধারণ ২৮ টি তফসিলি উপজাতি ও ৯টি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ঝাড়খণ্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লক্ষ। তার মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ৩১ লক্ষ ও মহিলা ১ কোটি ২৮ লক্ষ। এবার প্রথম ভোট দেবেন এমন ভোটার হল ১১ লক্ষ ৫ হাজার। মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৬২ টি। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫২০ টি গ্রামীণ এলাকায়। ৫ হাজার ৪২ টি রয়েছে শহরে। প্রথম ধাপে মোট ৬৮৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫২৮ জন। প্রথম পর্বে যাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন সরাইকেলা আসনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির চম্পাই সোরেন, জামশেদপুর পূর্ব আসনে ওড়িশার রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের পুত্রবধূ পূর্ণিমা দাস সাহু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.