সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আধুনিক বিশ্বে সরসরি যুদ্ধ সোজা কথা না। যেহেতু একটি দেশের পক্ষে ও বিপক্ষে একধিক দেশের স্বার্থ জড়িত। এই অবস্থায় পহেলগাঁওয়ে কাণ্ডের পর পাকিস্তানকে ভাতে মারতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। শনিবার পাকিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমস্ত আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। প্রশ্ন হল, ভারতের এই নির্দেশিকায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঠিক কতখানি প্রভাব পড়বে?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বার বার ভারতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি হামলায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অবস্থা বহুদিন ধরেই খারাপ। বিশেষত ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানের এমএফএন (Most Favoured Nation) মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে ভারত। এই সঙ্গে পাকিস্তানি পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। পালটা ইসলামাবাদও দিল্লির সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য স্থগিত করে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৩,৫৩৩.৬০ কোটি টাকার পণ্য ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে পাকিস্তানে। অন্যদিকে ভারতে আমদানি হয়েছিল মাত্র ১৬.৬৮ কোটি টাকার পাকিস্তানি পণ্য। গত পাঁচ বছরে ২০২২ সালে সব থেকে বেশি ২৬.৬২ কোটি টাকার পাকিস্তানি পণ্য ভারতে আমদানি হয়েছিল। একটি বিষয় স্পষ্ট যে ভারতের বিভিন্ন পণ্যের উপর পাকিস্তান যতখানি নির্ভরশীল, পাকিস্তানি পণ্যের তত গুরুত্ব নেই ভারতে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালেও দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে মোট ৯,৮১৭.৬০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য। উলটো পক্ষে মাত্র ৩.৯৯ কোটি টাকার পাক পণ্য ভারতে এসেছে। ওই বছরের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৯,৮২১.৫৯ কোটি টাকা।
ভারত যদি রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তবে পাকিস্তানে দেখা দেবে ওষুধের সংকট। কারণ সে দেশে রপ্তানি করা পণ্যের ৬০ শতাংশই হল ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য। এছাড়াও চিনি, কফি, চা, সবজি, মশলা, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, সার, দানাশস্য, প্লাস্টিক, রবার, গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে ভারতে আমদানি হয় ফল, বাদাম, তৈলবীজ, ওষধি গাছ ও জৈব রাসায়নিক দ্রব্য। ঘুরপথে আসে পোশাক, মশলা, ছোট যন্ত্রাংশ। বাণিজ্যমহলের বক্তব্য, ঘুরপথেও যাতে কোনও পাকিস্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের কূটনৈতিক প্রত্যাঘাতের জবাবে সমস্ত বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও।
সব মিলিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট—যাবতীয় পাকিস্তানি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণায় পাকিস্তানের খুব একটা অর্থনৈতিক ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। তবে পহেলগাঁও হামলার পর এই নিষেধাজ্ঞা অনেক বেশি কূটনৈতিক প্রত্যাঘাত। দিল্লির স্পষ্ট বার্তা, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্কে আগ্রহী নয় তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.