Advertisement
Advertisement
India

পাকিস্তানকে ‘উচিত শিক্ষা’, যুদ্ধ বাঁধলে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পড়বে ভারত?

আমেরিকা ও চিনের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধ ভারতকে সুযোগ করে দিয়েছে এশিয়ায় বাণিজ্যের অন্যতম হাব হয়ে ওঠার।

What will happen if India and Pakistan goes to war
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:May 5, 2025 5:28 pm
  • Updated:May 6, 2025 4:35 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের দাবিতে ফুঁসছে গোটা দেশ। যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে কোনও রকম পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি ভারতীয় সেনাকে। যদিও গত কয়েকদিনে একে একে তিন বাহিনীর প্রধান ও শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ম্যারাথন বৈঠক উসকে দিয়েছে যুদ্ধের জল্পনা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কী ১৯৭১, ১৯৯৯-এর মতো সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামছে ভারত? না কী সাম্প্রতিক অতীতে যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে সেনা, তেমনই কিছু হতে চলেছে এবারও! প্রকৃত প্রশ্ন হোলো, যদি যুদ্ধ শুরু হয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে তা কতটা প্রভাব ফেলবে ভারতের উপর?

প্রবল ঝড়ের আগে প্রকৃতি যেমন আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে যায়, বর্তমানে ঠিক সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানে। দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকা উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছে গোটা বিশ্ব। ইউরোপ, আমেরিকা, প্রতিবেশী চিন এমনকী ৭১-এর যুদ্ধে ভারতের অন্যতম সহযোগী রাশিয়াও ভারতকে পরামর্শ দিয়েছে যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের। যদিও দেশের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘বদলা’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারত উপদেশ চায় না, সঙ্গ চায়।’ পাশাপাশি গতকালই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, ”দেশ যা চাইছে, সেটাই হবে।” দিল্লির ৭ লোককল্যাণ মার্গে যেভাবে তৎপরতা শুরু হয়েছে তা যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও বেশী উস্কে দিচ্ছে।

Advertisement

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রচণ্ড আঘাত হেনে পাকিস্তানের মাটিতে গেড়ে বসা সন্ত্রাসের শিকড় পুরোপুরি উপড়ে ফেলা ভারতের জন্য একান্ত প্রয়োজন। যদিও তা করার জন্য মেপে পা ফেলা উচিত নয়াদিল্লির। এটাও ভেবে দেখা উচিত, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন পদক্ষেপ কতটা সঠিক হবে ভারতের জন্য। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমান সময়ে সরাসরি সামরিক যুদ্ধের চেয়ে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পথে পাকিস্তানকে ভাতে মারাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত ও ‘শত্রুর’ সঙ্গে সমস্ত রকম বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই পদক্ষেপই পাকিস্তানের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। ওই নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ বিরাট জলসংকটের মুখোমুখি হবে। যা আর্থিকভাবে কার্যত অন্ধ করে দেবে পাকিস্তানকে। অন্যদিকে, বিশ্ব বাণিজ্যে বর্তমান সময়ে ভারত এশিয়ার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। আমেরিকা ও চিনের মধ্যে চলা বাণিজ্য যুদ্ধ ভারতকে সুযোগ করে দিয়েছে এশিয়ায় বাণিজ্যের অন্যতম হাব হয়ে ওঠার। এতদিন যে জায়গা অধিকার করে রেখেছিল চিন। ট্রাম্পের শুল্কের বোঝা এড়াতে ভারতে ঢুকতে আগ্রহী বহু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংস্থা। সেক্ষেত্রে দেশ যদি যুদ্ধ বিধ্বস্ত হয় তবে সবার আগে ধাক্কা খাবে দেশের বাণিজ্য। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে বাণিজ্যিক ও বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি যুদ্ধ যদি শুরু হয় তাহলে মুসলিম বিশ্ব ও চিনের প্রত্যক্ষ সমর্থন পাবে পাকিস্তান। এই সমর্থন যুদ্ধকে টেনে নিয়ে যেতে পারে অনন্ত পথে। রাশিয়া-ইউক্রেন বা গাজা-ইজরায়েলের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে। ভারতের আর্থিক উত্থান স্তব্ধ করে দিতে, বিশ্বের বহু শক্তিধর দেশ ঠিক এমনটাই চায়। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পরোক্ষ মদত যোগাবে সেই দেশগুলি। বর্তমান সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে ভারতের যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। যুদ্ধে বন্ধু দেশ হিসেবে রাশিয়া ও ইজরায়েলকে অতীতের মতো এবারও ভারত পাশে পেলেও তাদের থেকে কতখানি সামরিক সহযোগিতা ভারত পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দুই দেশই বর্তমানে যুদ্ধরত। একক লড়াইয়ে পাকিস্তানকে পিঁপড়ের মতো পিষে ফেলতে সক্ষম ভারত। তবে যুদ্ধ শুরু হলে সে লড়াই যে অতীতের মতো একক লড়াই হবে না, তা বেশ বুঝতে পারছে বিশেষজ্ঞমহল।

শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকখানি বদলে গিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমারে ক্ষমতা বদল হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে বইছে ভারতবিরোধী চোরাস্রোত। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনৈতিক স্বার্থরক্ষায় ধীরে চলো নীতি নিয়েছে মোদি সরকার। সেখানে এই যুদ্ধ সবকিছু ওলটপালট করে দিতে পারে। যা মোটেই সুবিধাজনক হবে না ভারতের জন্য। কূটনীতির লড়াইয়ে সেক্ষেত্রে অনেকখানি খোলা মাঠ পেয়ে যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী চিন।

গোটা পরিস্থিতি বিচার করলে সরাসরি যুদ্ধের চেয়ে ভারতের জন্য উচিত পদক্ষেপ হবে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দেওয়া। কিংবা যে ছকে কাশ্মীরে হামলা চালানো হয়েছে ঠিক তেমনই পন্থায় অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রবল আঘাত হানা। গোটা পরিস্থিতি বিচার করে মোদি সরকার ঠিক সেটাই করতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement