নব্যেন্দু হাজরা: পরিকল্পনা খাতের টাকা আসছে না। আর তাতেই কার্যত বন্ধ বাসের রক্ষণাবেক্ষণ। বসে যাচ্ছে একের পর এক সরকারি বাস। রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষায় দঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবথেকে খারাপ অবস্থা এসি বাসের। যন্ত্রপাতি অমিল। ঠিকঠাক হচ্ছে না এসি-র গ্যাস চার্জ। তাতেই বিপত্তি। বাস ঠাণ্ডা তো হচ্ছেই না। উলটে যখন তখন মাঝরাস্তাতেও বিগড়ে যাচ্ছে। নামিয়ে দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। অফিস টাইমে ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। যে এসি বাস চলছে, তাতে বসেও গরমে ঘামতে হচ্ছে যাত্রীদের। নিত্য কন্ডাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা লেগেই থাকছে।
পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, বর্তমানে ৬৩টি এসি ভলভোর মধ্যে ২৫ টার মতো রাস্তায় ছুটছে। বাকিগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ডিপোয় পড়ে আছে। আর অশোক লেল্যান্ডের যে ৩৫০টি এসি বাস এসেছিল, তার মধ্যে ১২০-১৩০টার মতো রাস্তায় নামছে। এসি বাস ঠান্ডা রাখতে পাখা লাগানো থাকলেও তার অর্ধেক বিকল। দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, একবার যে বাস বিগড়োচ্ছে, তা আর ঠিক হচ্ছে না। কারণ যে সমস্ত সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে, টাকা না পেলে তারা গাড়ির কাজে হাত দিচ্ছে না। একের পর এক বাসের তাই জায়গা হচ্ছে ডিপোতে। ৮০টি বৈদ্যুতিক বাস দিয়ে তবু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু তার অবস্থাও যে খুব একটা ভাল তেমনটা নয়। গরম পড়তেই সেই বাসও বেশিরভাগ সময়ে ঠান্ডা হচ্ছে না। বাড়ছে ক্ষোভও। বিশেষত সূর্য যখন মধ্যগগনে সেই দুপুরের দিকে বাস আর ঠান্ডাই থাকছে না বলে অভিযোগ।
যাত্রীদের বক্তব্য, দুপুরে তো ঠান্ডা হচ্ছেই না বাস, আর সকালের দিকে অফিস টাইমে যে পরিমাণ ভিড় হচ্ছে, তাতেও এসি-র হাওয়া গায়ে লাগছে না। জানলা-দরজা বন্ধ থাকায় বাইরের হাওয়াও প্রবেশ করছে না। ফলে বাসের ভিতরে একেবারে গুমোট পরিবেশ হয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো ঘামতে হচ্ছে প্রত্যেককে। আর যাত্রীদের এই ক্ষোভের কথা শুনতে হচ্ছে কন্ডাক্টরদের। তাঁদের বক্তব্য, “বাসের এসি যদি কাজ না করে, তাহলে আমাদের কী করার আছে! বাসের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। তার জন্য কথা শুনতে হয় আমাদের।” দূষণ কমাতে রাজ্যের তরফে যেখানে আরও বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক বাস নামানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে শহরে চলা বাসগুলোর এসি-র এই বেহাল দশা ভাবাচ্ছে পরিবহণ নিগমের কর্তাদেরও। এখানে যে ই-বাসগুলো চলে সেগুলো মূলত ১২ মিটার লম্বা। তাতে ৩২ টনের এসি লাগানো আছে। আর ৯ মিটার বাসে ২৭ টনের। কিন্তু পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা বলছেন, বাস যখন এসেছিল তখন ভালই ঠান্ডা হচ্ছিল, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না ঠিক করে। তাতেই বিপত্তি।
আর রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়ার কারণ নিগমের কোষাগার ফাঁকা। বেসরকারি বাসের ভাড়া নিজেরা বাড়িয়ে নিয়েছেন মালিকরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধা হতে পারে মনে করেই সরকারি বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার। ফলে আর্থিক হাল বেহালই রয়েছে। পরিবহণ দফতরের কর্তারা তাই বলছেন, যতদিন না পর্যন্ত এই ফান্ডের টাকা আসছে, ততদিন এভাবেই খুঁড়িয়ে চলতে হবে। তারপর যে বাসগুলো রাস্তায় নামানোর উপযুক্ত সেগুলোকে সারিয়ে ফের রাস্তামুখো করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.