গোবিন্দ রায়: তিন দশকের বেশি সময় ধরে আদালতের চক্কর কেটেছেন। বেড়েছে বয়স। চুলে পাক ধরেছে। ৩৬ বছরের লড়াইয়ের পর মিলল সুবিচার। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ১০ শতাংশ সুদ-সহ ২৫ বছরের বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে স্কুল শিক্ষিকাকে।
তরুণী অবস্থা থেকে শুরু হয়েছিল স্কুল শিক্ষিকা শ্যামলী ঘোষের লড়াই আইনি লড়াই। ছিয়াত্তরের দোরগোড়ায় এসে পেলেন বিচার। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের জেরে আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন শ্যামলীদেবী। তবু দমে যাননি। মানেননি হারও। অবশেষে এল জয়। কী নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই?
বাম জমানায় সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে ১৯৭৬ সালে হাওড়ায় শ্যামপুর হাই স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শ্যামলী ঘোষ। ঠিক ৪ বছরের মাথায় তাঁকে স্কুলে ঢোকা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক। জানান, তাঁর চাকরি চলে গিয়েছে। কিন্তু কেন চাকরি গেল, তা খোলসা করে জানানো হয়নি। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেতনও। চাকরির মেয়াদ অনুযায়ী ২০০৫ সালে অবসর নেন শ্যামলীদেবী। অবসরকালে প্রাপ্য অর্থ তিনি পাননি বলে অভিযোগ। শিক্ষিকা জানিয়েছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শিক্ষাদপ্তর, সকলকে একাধিক চিঠি লিখেও কোনও লাভ হয়নি। সুবিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন শ্যামলীদেবী।
১৯৮৬ সালে প্রথমবার আদালতের দ্বারস্থ হন শিক্ষিকা। ২০১৩ সালে তাঁর পেনশনের ব্যবস্থা করেছিল হাই কোর্ট। কিন্তু বকেয়া বেতনের বিষয় কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি। বকেয়া বেতনের দাবিতে ফের আদালতে আবেদন জানান ওই শিক্ষিকা। সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে। কিন্তু মাঝে তাঁর বেঞ্চ বয়কট করেছিলেন সরকারি আইনজীবীরা। ফলে ওই শিক্ষিকা বারবার এসে ফিরে যাচ্ছিলেন।
অবশেষ গত ২৮ এপ্রিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তাঁর নির্দেশে বলেন, এই প্রবীণ নাগরিক যেভাবে আসছেন এবং ফিরে যাচ্ছেন তা আদালত মোটেই ভালভাবে নিচ্ছে না। চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল আদালত। বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষাদপ্তরের আইনজীবীর উপস্থিতিতে নির্দেশ দেয়, এই স্কুল শিক্ষিকাকে তাঁর অবসরকালীন বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। সুবিচার পেয়ে শিক্ষিকার বক্তব্য, “হাই কোর্ট না থাকলে সাধারণ মানুষ বাঁচতে পারে না। ধৈর্য হারালে চলবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.