কলহার মুখোপাধ্যায়: সেই ফেব্রুয়ারি মাসে অফিসের কাজে যেতে হয়েছিল ঢাকায়। ফেরার কথা ছিল তাড়াতাড়িই। কিন্তু লকডাউন সব বানচাল করে দিল। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে ঈশাণদেব ঢাকাতেই আটকে পড়েছিলেন। এতদিন পর, সোমবার, কেন্দ্রের ‘বন্দে ভারত মিশন’এর সহায়তায় স্বদেশের মাটি ছুঁলেন ঈশাণদেব। ছেলেকে দেখতে বাবা গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। কিন্তু ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারলেন না। কারণ, করোনা আবহে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেলে এখন ১৪দিন থাকবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে। এই অবস্থায় বাবা আক্ষেপ চেপে রাখতে পারলেন না। বলেই ফেললেন, ‘ঢাকায় এতদিন ধরে আলুসেদ্ধ, ভাত আর ডিমভাজা খেয়েই ওকে কাটাতে হয়েছে।’
এক নামী হোটেল সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদে চাকরি করেন ঈশাণদেব চট্টোপাধ্যায়। সেই কাজেই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা গিয়েছিলেন। ছিলেন নামী হোটেলেই। কিন্তু নামী হোটেলে থাকলেই কি আর আপন ঘরের আরাম মেলে? তা তো নয়। তাই তো লকডাউনে আটকে পড়েও নামী হোটেলে মনের মতো খাবার খেতে পাননি ঈশাণদেব। তাই তো রোজকার মেনু হয়ে গিয়েছিল – ভাত, আলুসেদ্ধ, ডাল, আর ডিমভাজা। মন্ত্রীর শোভনদেবের ছেলে এদিন বিমানবন্দরে বাবাকে চোখের দেখাটুকু দেখেই চলে যান বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে। সেখানেই তিনি আপাতত কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তারপর স্বাস্থ্যপরীক্ষায় পাশ করলে, তবে বাড়িতে বাবা,মা ও স্বজনদের কাছে ফিরবেন।
ঈশাণদেবের সঙ্গে আজ ঢাকা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান AI 231 এ ফিরেছেন আরও ১৬৮ জন। এঁরা বেশিরভাগই মেডিক্যাল পড়ুয়া। কেউ বা ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন, কেউ আত্মীয়ের বাড়ি। তারই মধ্যে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন সকলে। সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনওভাবেই ফিরতে পারছিলেন না। এতদিন পর বিশেষ উদ্ধারকারী বিমানে কলকাতার মাটি ছুঁলেন তাঁরা। স্বস্তি ফিরলেও শান্তি ফিরল না। কারণ, কোয়ারেন্টাইনের বিধিনিষেধ। তাই তো বিমানবন্দরের কাঁচঘেরা লাউঞ্জের বাইরে থেকেই প্রিয়জনকে দেখে আপাতত সাধ মেটাতে হল পরিবারের সদস্যদের। এই দৃশ্যও দেখা গেল, কাঁচের এপারে আর ওপারে মা-মেয়ে কথা বলছে ফোনে! বছর বিরাশির যদু পাল কাঁচের দেওয়ালের বাইরে ছেলে আর নাতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেঁদে ফেললেন। তিনি ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। এতদিন পর স্বজনদের দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না।
এই যাত্রীদের মধ্যে ১০৫ জনকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাউকে বাইপাসের ধারে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ভবনে, কাউকে রাজারহাটের এনবিসিসিতে পাঠানো হয়েছে। আরেকদলকে পাঠানো হয়েছে ডানকুনিতে। আর বাকিরা নিজেদের দায়িত্বে আলাদাভাবে শহরের পাঁচতারা হোটেলের অন্দরে পৃথক হয়ে থাকবেন। তার জন্য বেশ মোটা অংকের খরচও করতে হবে অবশ্য তাঁদের। তারই কিছুটা আন্দাজ দিলেন ঢাকায় ডাক্তারি পড়তে যাওয়া দুই ভাই – পৃথ্বীজিৎ ও প্রমিত সাহা। তাঁরা যে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন, তাতে প্রতিদিন ৩৫৮৪ টাকা খরচ। মাদিয়া আমেনিয়া নামে আরেকজন হিসেব দিলেন, সবমিলিয়ে তাঁকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে এই যে এতদিন পর নিজের জায়গায় ফেরা হল, এতেই তাঁরা সকলে খুশি। এতদিন স্বজনহীন হয়েছিলেন, আরও কয়েকটাও দিনও থাকবেন নাহয়। তারপর তো পাকাপাকি ঘরে ফেরা।
ছবি ও ভিডিও: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.