সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে গোটা দেশজুড়ে লকডাউন (lockdown) চলছে। অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দোকান ছাড়া আর কোনও দোকান খোলা নেই। এর ফলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী লক্ষাধিক দুধ বিক্রেতা ও মিষ্টির দোকানের মালিকরা। সমস্যা পড়েছিল অবলা গরুগুলোও। কারণ, মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় প্রচুর দুধ নষ্ট হচ্ছিল। ফলে দুধ দোয়ানো বন্ধ রেখেছিল গোয়ালারা। এদিকে দুধ না দোয়ানোর ফলে গরুর শরীর খারাপ হচ্ছিল। পেট ফুলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল তারা। পাশাপাশি দুধ বিক্রি না হওয়ায় গরুর খাদ্য খড়, দানা, ভুসি ও খোল কিনতে পারছিলেন না তাদের মালিকরা। এই রাগে দুদিন আগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গরুর দুধ পুকুরের জলে ফেলে দিচ্ছিলেন তাঁরা। রাজ্যবাসীর পাশাপাশি বিষয়টি চোখে পড়েছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। যা দেখে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছিলেন তিনি। অবশেষে সোমবার এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একটা উপায় খুঁজে বার করলেন মানবিক মুখ্যমন্ত্রী। বুঝিয়ে দিলেন তিনি সবার কথাই চিন্তা করেন।
সোমবার নবান্নে আয়োজিত পর্যালোচনা বৈঠক থেকে ঘোষণা করলেন লকডাউনের মধ্যে চার ঘণ্টা করে মিষ্টির দোকান খোলা যাবে। এর জন্য বেলা ১২টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিলেন। এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘লকডাউনের ফলে মিষ্টির দোকানগুলি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে পনিরের ব্যবসাও। তাই প্রচুর দুধ নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে সমস্যায় পড়ছেন অনেক মানুষ। অবলা পশুগুলো খুব কষ্ট পাচ্ছে। সবার কথা চিন্তা করে ঘণ্টা চারেকের জন্য মিষ্টির দোকান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ দোকানগুলি খোলা থাকলে দুধ নষ্ট বন্ধ হবে। বাচ্চাদের দুধ নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যারও সমাধান হবে। তাই দুপুর ১২টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত মিষ্টির দোকান খুলে রাখতে বলা হয়েছে। বাচ্চাদের দুধের বিষয়েও প্রশাসনকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে সামনের দুটো সপ্তাহ খুব সেনসিটিভ। এই সময়টা আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। তবে লকডাউনের মধ্যে পয়লা বৈশাখ পড়েছে তাই ওইদিন কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও এই বিষয়টি ১৩ তারিখে বসে আলোচনা করার পরেই জানানো হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পরে খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে রাজ্যের দুধ বিক্রেতা ও মিষ্টির দোকানের মালিকদের মধ্যে। দু’হাত জোড় করে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাঁর মানবিক মুখের ভূয়সী প্রশংসা করছেন তাঁরা। এপ্রসঙ্গে কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত মিষ্টির দোকান বলরাম মল্লিক অ্যান্ড রাধারমণ মল্লিকের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বলেন, ‘দিদির এই সিদ্ধান্তে আমরা অভিভূত। তিনি যে সবার কথা ভাবেন এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তা ফের প্রমাণ হল। মিষ্টির দোকানগুলি বন্ধ থাকায় আমরা যেমন সমস্যায় পড়েছিলাম তেমনি অবলা গরুগুলোও প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল। দুধ না দোয়ানোর ফলে তাদের পেট ফুলে যাচ্ছিল। খাবারের অভাব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নজর সবদিকে থাকে। তাই এই সমস্যাটি তাঁর চোখ এড়ায়নি। এর জন্য তাঁকে আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এবিষয়ে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.