অর্ণব আইচ: পথে ঘাটে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। একাধিক সচেতনতা সত্ত্বেও কোনও কাজ হচ্ছে না। কমছে না দুর্ঘটনার সংখ্যা। পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছে অভিযুক্তরা। এবার সেই অভিযুক্তদের ক্লাস নিলেন ডিসি ট্রাফিক সন্তোষ পাণ্ডে। শহরের একাধিক দুর্ঘটনার ছবি দেখে আঁতকে উঠল অভিযুক্তরা।
সুকিয়া স্ট্রিটের কাছে স্কুটিটি সিগন্যাল ভেঙে ডানদিকে ঘুরতেই গাড়ির ধাক্কা। ছিটকে পড়ল দুই আরোহী। দিনের বেলায় রাজভবনের কাছে প্রচণ্ড গতিতে বাইক ধাক্কা দিল বাসে। রাতের শহরে ফ্লাইওভারের উপর মদ্যপ বাইক চালকের ধাক্কা ডিভাইডার ও পাশের পাঁচিলে। একের পর এক সিসিটিভির ফুটেজ ভেসে উঠছে স্ক্রিনে। আঁতকে উঠছেন দর্শকের আসনে থাকা ‘ছাত্র’রা। কয়েকজন বলেই উঠলেন, “আমরা যে এভাবেই বাইক চালাই, তা আগে বুঝতে পারিনি।” ২১০ জন ছাত্রের মধ্যে প্রত্যেকেই বাইক আরোহী। তাঁদের প্রত্যেকেই নাকা চেকিংয়ের সময় ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। কেউ হেলমেট না থাকার জন্য। আবার কেউ বেপরোয়াভাবে বা মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালানোর অভিযোগে। শনিবার দুপুরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে এই ২১০ জন ছাত্রের ক্লাস নিলেন ডিসি (ট্রাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে। ছিলেন এসি অলোক রায়, ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুলের ওসি প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী ও অন্য অফিসাররা। ডিসি (ট্রাফিক) বাইক আরোহী ওই ছাত্রদের প্রশ্ন করেন, “এর পর নিশ্চয়ই আপনারা আর ট্রাফিক আইন ভেঙে বাইক চালাবেন না?” ছাত্ররা একসঙ্গে বলে ওঠেন, “আর আইন ভাঙা নয়।” অনেকেই ডিসি (ট্রাফিক) ও ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুলের অফিসারদের বলেন, তাঁরা ফের এই ক্লাস করতে চান। আরও কিছু শিখতে চান। ডিসি (ট্রাফিক) জানান, নাকা চেকিং শহরে প্রত্যেকদিন চলবে। বাইক আরোহীদের এই ধরনের ক্লাস আবার নেওয়া হবে।
সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রকল্পে বাইক আরোহীদের নিয়ম মানার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শহরে নাকা চেকিংয়ে ধরা পড়েছে কয়েক হাজার বাইক আরোহী। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ হেলমেট না পরে ও এক বাইকে তিন আরোহী বা ‘ট্রিপল রাইডিং’ করে ধরা পড়ে। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচণ্ড গতিতে বেপরোয়া ও মদ্যপান করে বাইক চালানো। প্রত্যেকটি ট্রাফিক গার্ড থেকে ৮ জন করে অভিযুক্ত বাইক আরোহীকে এই ক্লাসে পাঠানো হয়। ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুলের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয় ছাত্রদের। হেলমেট ছাড়া, মদ্যপান করে বা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে বাইক চালালে কীভাবে একের পর এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা দেখানো হয়। ট্রাফিক শিক্ষকদের মতে, বাইক দুর্ঘটনায় এভাবে যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তিনি হয়তো ৫০ বার এভাবেই আইন লঙ্ঘন করে বাইক চালিয়েছেন। কিন্তু ৫১তম বার ট্রাফিক আইন ভাঙতে গিয়েই ঘটেছে দুর্ঘটনা। এই ভিডিও ফুটেজ দেখে ছাত্ররা আঁতকে উঠেছেন। কম সংখ্যক হলেও ছাত্রীরাও ছিলেন এই ক্লাসে। সিগন্যাল, জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সাইন নিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পার্ক সার্কাসে হেলমেট ছাড়া ধরা পড়েছিলেন এমবিএ ছাত্র আরশাদ আলম ও কর্মাসের ছাত্র হর্ষ সচদেব। হর্ষ জানান, মনে করেছিলেন বাড়ির কাছেই যাচ্ছেন, তাই হেলমেট প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এই ক্লাসে এসে বুঝতে পারছেন কেন হেলমেট পরার প্রয়োজন। আরশাদ জানান, এই ধরনের ক্লাস অভিযুক্ত বাইক আরোহী ছাড়াও সাধারণ মানুষকেও যদি করানো হয়, তবে শহরে পথ দুর্ঘটনা আরও কমতে পারে। এই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.