অর্ণব আইচ: বন্ধুত্ব থেকেই ঘনিষ্ঠতা। তারই জেরে বিভিন্ন সময়ে দেশের বহু জায়গায় ভ্রমণ। আর বন্ধুত্ব থেকে ‘ভালবাসা’র জেরেই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীকে ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি ‘উপহার’ দেন অয়ন শীল (Ayan Sil)। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, সম্প্রতি শ্বেতা চক্রবর্তীকে জেরা করে এই তথ্য এসেছে তাদের হাতে। দু’জনের মধ্যে টানা ১৪ বছর ধরে বন্ধুত্ব ও সেখান থেকে ঘনিষ্ঠতার কথা সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে আধিকারিকদের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি, এমনই দাবি ইডির।
অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়েই উঠে এসেছিল তাঁর বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর নাম। শ্বেতার গাড়ি ও সম্পত্তির নথি অয়নের অফিস থেকেই উদ্ধার করেন ইডির গোয়েন্দারা। প্রথমে শ্বেতা জানিয়েছিলেন, তিনি অয়নকে কাজের সূত্রেই চেনেন। কয়েকবার তাঁর সঙ্গে অয়নের দেখা হয়েছে। তিনি অয়নের প্রোডাকশন হাউসে কাজ করতেন। অভিনেত্রী হিসাবে তাঁকে বেছে নিয়েছিল অয়ন শীলের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজেন’। তিনি পারিশ্রমিক বাবদই ১২ লক্ষ টাকার গাড়ি পেয়েছিলেন অয়নের কাছ থেকে। এই ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে কিছুদিন আগেই শ্বেতা চক্রবর্তীকে তলব করে ইডি আধিকারিকরা জেরা করেন।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন তথ্য জানতে শ্বেতাকে টানা জেরা করা হয়। একসময় শ্বেতা প্রায় কেঁদেও ফেলেন। তিনি দাবি করতে থাকেন যে, অয়নকে তিনি ব্যবসায়ী হিসাবেই চিনতেন। তিনি যে এত বড় শিক্ষক নিয়োগ ও পুর নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তা তিনি জানতেনই না। যদিও ইডির দাবি, জেরার মুখে শ্বেতা আধিকারিকদের কাছে স্বীকার করেন যে, ১৪ বছর আগে একই দপ্তরে কাজের সূত্রেই দু’জনের মধ্যে পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকেই ঘনিষ্ঠ হন তাঁরা। এর পর বিভিন্ন সময় যে অয়ন ও শ্বেতা ভ্রমণে গিয়েছেন, শ্বেতার বক্তব্য থেকেই তা জানতে পেরেছে ইডি। ইডির দাবি, গোয়ার মতো দেশের বিশেষ কয়েকটি জায়গায় অয়ন ও শ্বেতা ঘুরতে যান। অয়নের প্রোডাকশনের একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন শ্বেতা। সেই ছবির শুটিং হয়েছিল মুম্বইয়ে।
শ্বেতা ইডি আধিকারিকদের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনি ও অয়ন একসঙ্গে ‘কাজের খাতিরেই’ মুম্বইয়ে কিছুদিন ছিলেন। তবে দু’জন একসঙ্গে বিদেশে ভ্রমণ করেছিলেন, এমন প্রমাণ এখনও ইডির হাতে আসেনি। উত্তর শহরতলির কামারহাটির যে ফ্ল্যাটটি শ্বেতা চক্রবর্তীর নামে অয়ন কেনেন, সেটি ৫০ লক্ষ টাকায় কেনা হয়। কিন্তু খাতায় কলমে দেখানো হয়, সেটি কেনা হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকায়। বাকি টাকা প্রোমোটারকে নগদে দেন অয়ন শীল। তবে অয়ন তাঁকে ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে যে গাড়ি কিনে দেন, সেটি শ্বেতা পরে তাঁকে সত্যিই ফেরত দিয়েছিলেন কি না, সেই তথ্য ইডি জানার চেষ্টা করছে। ইডির কাছে খবর, এ ছাড়াও সময়ে সময়ে অয়ন শ্বেতাকে প্রচুর উপহার দিয়েছেন। ‘পকেট মানি’ হিসাবে বেশ কয়েক লক্ষ টাকাও অয়ন শ্বেতাকে দেন। এমনকী, বেশ কয়েক লক্ষ টাকার গয়নাও অয়ন শ্বেতাকে কিনে দিয়েছেন বলে ইডির কাছে খবর এসেছে। সেই তথ্যগুলিও যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.