গৌতম ব্রহ্ম: তাঁর জীবনযাপনে লালন ফকির। মাথায় গিজগিজ করছে লোকসুর। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘আকাশটা কাঁপছিল ক্যান’, ‘বল খুদা বল’। সেই মাথাই হঠাৎ বিগড়ে গেল। কখনও মাথার ভিতরে তুষারপাত হয়। তো কখনও অগ্ন্যুৎপাত। কখনও আবার বেজে ওঠে হাজার হাজার ঘণ্টা। সেই সময় আর মানুষ থাকেন না হামিদা খাতুন। ঘরদোর বন্ধ করে মাথার চুল ছিঁড়তে থাকেন। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বহুবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কখনও ছাদ থেকে লাফিয়েছেন। কখনও চেষ্টা করেছেন গলায় ফাঁস লাগানোর। কখনও আবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টা বারবার বিফলে গিয়েছে।
গত আট বছর ধরে হামিদাকে নিয়ে দিশাহার তাঁর পরিবার। স্বামী মহম্মদ হবিবুর রহমান জানালেন, গত তিন বছর ধরে খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। ঘর করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আট জন প্রথম সারির সাইকিয়াট্রিস্ট দেখেছেন হামিদাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন সেই সময়ই এক প্রতিবেশী কলকাতায় আসার পরামর্শ দেন হবিবুরকে। কলকাতায় এসে চিকিৎসা করিয়ে ১৪ দিনেই প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন হামিদা। মাথার ভিতরটা ঠান্ডায় আর জমে যায় না। অগ্নু্ৎপাত হয় না। মাথায় আবার ফিরে এসেছেন লালন। ঘণ্টা থেমে বেজেছে একতারা। হামিদা জানালেন, “কী কষ্ট যে হয়েছে শেষ তিন বছর বলে বোঝাতে পারব না। নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণই ছিল না। নিজের সাধের চুল নিজেই ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।’’
হামিদার চিকিৎসক ডা. প্রদীপ সাহা জানালেন, “আমার কাছে যখন আসেন তখন হামিদার মাথা জোড়া টাক। ভাল হওয়ার বিশ্বাসটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকী, চিকিৎসা নিতেও অস্বীকার করেন। শুধু হবিবুর ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে গিয়েছেন। তাতেই ফল মিলেছে। এখন হামিদা প্রায় সুস্থ। ২ অক্টোবর হামিদাকে প্রথম দেখেন প্রদীপবাবু। গত রবিবার রুটিন চেক-আপে এসেছেন। কলকাতায় একটি গেস্ট হাউসে আছেন। প্রদীপবাবু জানালেন, এই ধরনের রোগ অত্যন্ত বিরল। জীবনে প্রথমবার পেলাম। এটা ‘পিকিউলিয়ার সাইকোটিক ডিসঅর্ডার অ্যান্ড রিফ্র্যাকটরি ইন নেচার।’ অর্থাৎ প্রথম প্রথম কোনও ওষুধ কাজ করছিল না হামিদার উপর। অবশেষে শাপমুক্তি।
ছবি: পিন্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.