গৌতম ব্রহ্ম: টেনস, আইএফটি, এসডব্লুডি, এফইএস। শব্দগুলির সঙ্গে খুব কম সরকারি হাসপাতালের পরিচয়। ব্যথা কমানোর এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি এবার এক ছাদের তলায় নিয়ে এল টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতাল।
আগে শুধু ফিজিওথেরাপি করানো হত। মাস দু’য়েক হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জেলা হাসপাতালে চালু হয়েছে ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ সংক্ষেপে পিএমআর। নেতৃত্বে ডা. উষ্ণীষ মুখোপাধ্যায়। এখানেই যন্ত্রণাকাতর রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে টেনস (ট্রান্সকিউটেনাস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ), আইএফটি (ইন্টার ফেরেনশিয়াল থেরাপি), এসডব্লুডি (শর্ট ওয়েব ডায়াথার্মি)-র মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রণা উপশমের পদ্ধতি। ওয়াক্স বাথ, ইউএসটি-র মতো প্রচলিত পদ্ধতিও রয়েছে। উষ্ণীষবাবুর দাবি, আর্থারাইটিক, নিউরোলজিক্যাল, পোস্ট ট্রমাটিক, স্পন্ডেলাইটিস, ক্রনিক ডিজেনারেটিভ পেন-সব ধরনের ব্যথার পাসওয়ার্ড রয়েছে এই পিএমআর সেন্টারে। এমনকী, ধমনির ভিতরে ইন্ট্রা আর্টিকুলার ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। নার্ভ ব্লক করা হয়। শিয়ালদহ ইএসআইয়ের পেন ম্যানেজমেন্ট ক্লিনিক, পিজি হাসপাতালের পিএমআর বিভাগ ছাড়া আর কোথাও ব্যথা উপশমের এত বিস্তৃত পরিষেবা নেই।
প্রতি সোমবার, মঙ্গলবার আউটডোর চলে। তিলধারণের জায়গা থাকে না ওই দিন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় পৌঁছনোই দুষ্কর হয়ে ওঠে। উষ্ণীষবাবু জানান, তিনি ছাড়াও ডা. প্রবীর মণ্ডল নামে আরও এক চিকিৎসক রয়েছেন পিএমআর বিভাগে। থেরাপিস্ট রয়েছেন পাঁচজন। সপ্তাহে হাজারখানেক রোগী দেখা হয়। এর মধ্যে ৩০ শতাংশকে ‘ডে কেয়ার’ দেওয়া হয়।
কী ধরনের রোগের চিকিৎসা হয়?
স্ট্রোকের পর অনেক রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। অনেকের শরীর বেঁকে যায়। অনেকের আবার অস্ত্রোপচারের পর শরীরের কোনও অংশে অসাড়তা দেখা যায়। তাছাড়া স্পন্ডেলাইটিস, আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির রোগী তো আছেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের স্নায়ুশল্যবিদের (নিউরো সার্জন) কাছে পাঠাতে হয়। ডাক্তারবাবুদের বক্তব্য, গোটা বিশ্ব এখন ওষুধ কম ব্যবহার করে রোগ নিরাময়ের দিকে ঝুঁকছে। গুরুত্ব বাড়ছে ফিজিক্যাল মেডিসিনের। ব্যথা কমানোর বিজ্ঞান নিয়েও বিশ্বময় প্রচুর গবেষণা চলছে। সেখানে বাঙুরের এই উদ্যোগ সাড়া জাগিয়েছে। বহু রোগী উপকার পেয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অর্থোপেডিক সার্জন, নিউরো সার্জনও যে ব্যথা কমাতে পারেননি তা কমিয়েছেন এখানকার ডাক্তারবাবুরা। অনেকের ব্যথা কমানোর ওষুধের ডোজও কমেছে। তাতে রোগী ভালই আছেন। সব মিলিয়ে এই নতুন প্রয়াসে প্রলেপ পড়েছে বহু যন্ত্রণায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.