ফাইল ফটো
অর্ণব আইচ: সামনেই ভোট ঘোষণা। তার আগে থেকেই ভিনরাজ্য থেকে শহরে আসছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কাদের হাতে এই টাকা আসছে, টাকা আসার কারণই বা কী, সেই উত্তর পেতে এবার শহরে হাওয়ালা কারবারিদের উপর নজরদারি শুরু করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ভোটের আগে থেকেই শহরে টাকা লেনদেনের উপর নজরদারি চালানো হয়। এবার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে এই নজরদারি। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে খবর, হিসাব বহির্ভূত প্রচুর পরিমাণ বেআইনি টাকা কলকাতায় আসছে বাইরের রাজ্য থেকে। সেই টাকার উপর নজরদারি চালানোর কাজ শুরু হয়েছে। নজরদারির প্রথমেই মধ্য প্রথমে কলকাতার পোস্তার দু’টি জায়গা থেকে দু’দফায় ১১ লক্ষ্য ৬০ হাজার ৭০০ টাকা ও ১৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এর পর আরও বেশ কয়েকবার তল্লাশি করে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বউবাজার থানার পুলিশ দীনেশ লোহিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে ৬০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে।
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ভিনরাজ্য থেকে এই প্রচুর পরিমাণ টাকা আসছে হাওয়ালার মাধ্যমে। শহরে যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার আড়ালে হাওলার কারবার চালানো হয়, সেই বিষয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত। হাওয়ালা কারবারিদের মধ্যে একটি অংশ বিদেশের টাকা লেনদেন করে। বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককের সঙ্গে হরবকত টাকার লেনদেন হয় কলকাতার। এমনকী, পাকিস্তান থেকে টাকা ঘুরপথে কলকাতায় এসেছে, এমন অভিযোগও এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিদেশের সঙ্গে যে হাওলা কারবারিরা লেনদেন করে, তাদের উপর নজর থাকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদেরও। কিন্তু দেশের মধ্যে হাওয়ালার কারবার চললে, অর্থাৎ এক রাজ্য থেকে টাকা অন্য রাজ্যে গেলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আর সেদিকে বিশেষ নজর দেন না। কিন্তু সেই হাওয়ালা কারবারিদের মাধ্যমে টাকা আসে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, হায়দরাবাদ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি থেকে। এর আগেও শহরে একাধিক ডাকাতির মতো অপরাধের ঘটনার কিনারা করতে গিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দারা দেখেছেন, কোনও ব্যবসার গদি থেকে ডাকাতি হয়েছে বলা হলেও তা আসলে হাওলার টাকা।
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার আড়ালেই চলছে হাওলার কারবার। ভিনরাজ্য থেকে কোনও ব্যক্তি বেআইনিভাবে হিসাব বহির্ভূত টাকা পাঠানোর জন্য বেছে নিচ্ছে হাওলা কারবারিদের। যে ব্যক্তি অন্য রাজ্য থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন, তিনি সেখানকারই কোনও কারবারির কাছে টাকা জমা করেন। তাঁকে একটি নম্বর বা কোড দেওয়া হয়। সেই কোড তিনি মেসেজ করে বা হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দেন কলকাতার সেই বিশেষ ব্যক্তিকে, যিনি টাকা হাতে নেবেন। কোন হাওলা কারবারির কাছ থেকে টাকা নিতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ওই কোড নম্বর দিয়ে টাকা নিয়ে আসা হয়। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বড়বাজার, পোস্তা, জোড়াসাঁকো, জোড়াবাগান এলাকায় চলছে হাওলার কারবার। সেই হাওলার গদিগুলির সন্ধান চালাতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। ওই গদি থেকে যাঁরা টাকা নিয়ে বের হচ্ছেন, তাঁদের তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশের মতে, ব্যাংককে ফাঁকি দিতে অনেক ব্যবসায়ী হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ভোটের আগে রাজ্যের বাইরে থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর কাছে মোটা পরিমাণ টাকা আসার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার টাকা দিয়ে ভোটারদের উপরও প্রভাব ফেলা হতে পারে। তাই এই তল্লাশি এখন ক্রমাগত চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[জট কাটিয়ে রাতদুপুরেই শপথ গোয়ার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর, ক্ষোভে ফুঁসছে কংগ্রেস]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.