নব্যেন্দু হাজরা: আকারে বড়। ধবধবে সাদা। খোসা ছাড়ানো সোজা। গায়ে কোনও দাগ নেই। দামেও আবার কম। দেখেই মনে হবে একেবারে টাটকা। ফলে অগ্নিমূল্য বাজারে অনেকেই তাকে ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন না বুঝেই। তার ঝাঁজেই স্বাদ বাড়ছে মাছ-মাংস থেকে ডিম-তরকারির।
শহরের একাধিক বাজারে দেদার বিকোচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না রসুন। যা খেলে কিনা মারণব্যাধিরও সম্ভাবনা রয়েছে। বড়বাজার থেকে লেক মার্কেট, মানিকতলা বাজার-সহ বহু জায়গাতেই এই চায়না রসুনের হদিশ মিলেছে। সম্প্রতি লেক মার্কেটে হানা দিয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের হাতেও ধরা পড়েন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। নিষিদ্ধ চায়না রসুন বিক্রি করায় তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। এবং ওই রসুন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ধরা পড়লে বিরাট অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। গোটা দেশে এই চায়না রসুন নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বিক্রি বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তা ঢুকে পড়েছে বাংলার বাজারে।
এদেশে উৎপাদিত সাধারণ রসুনের যেখানে দাম ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি সেখানে এই রসুন বিকোচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ফলে অনেকেই কম দাম দেখে তা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন বিপদ। ভারতে খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা ও গুণমান নিশ্চিত করে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)। কোনও খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি থাকলে তা এফএসএসএআই থেকে ছাড়পত্র পায় না। সেই মর্মেই বেশ কিছু বছর আগে চিনা রসুনকে ভারতে নিষিদ্ধ করেছিল এফএসএসএআই। চিনা রসুনে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণেই ২০১৪ সালে এর আমদানি ও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তবুও নজর এড়িয়ে বেআইনিভাবে এই রসুন বিক্রি করছেন অনেকে। আর মানুষজন তা কিনছেনও। তাতেই বাড়ছে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। কলকাতার একাধিক বাজারেও যে রসুনের সন্ধান মিলেছে।
ইতিমধ্যেই এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের তরফে বড়বাজারে হানা দিয়ে ফাইন করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মানিকতলা বাজারে সব অ্যালার্ট হচ্ছে। আর সম্প্রতি লেক মার্কেটে গিয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাই দেখেন, চায়না রসুন বিকোচ্ছে সেখানে। তারপর খোঁজ নিয়ে অন্যান্য বাজারেও তার সন্ধান মেলে। ব্যবসায়ীদের জানানো হয়, ভবিষ্যতে এই রসুন বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে রসুন তো বাজেয়াপ্ত করা হবেই, সেইসঙ্গে মোটা টাকা জরিমানাও করা হবে। রসুন উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম চিন। কিন্তু সেদেশের রসুনে উচ্চ পরিমাণে পেস্টিসাইডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, “এই রসুন খেলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কাও থাকে। হতে পারে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী অসুখও।” সেজন্য ভারত-সহ অন্যান্য দেশে এই চিনে উৎপাদিত রসুন নিষিদ্ধ। এমনকী বেশ কিছু দেশে চিনা রসুন আমদানি ও রপ্তানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপও করা হয়েছে। টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “কলকাতার বাজারেও এই চায়না রসুন বিক্রি করছে কোনও কোনও ব্যবসায়ী। আমরা তাঁদের সতর্ক করেছি। বিষয়টা আমরা টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে বলব। এই রসুন নিষিদ্ধ। এটাকে বন্ধ করতেই হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.