ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: আমানতকারীদের বিপুল টাকা হাতানোর অভিযোগ। চক্র গ্রুপের কর্তা পার্থ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মঙ্গলবার ওই চিটফান্ড সংস্থার কর্তাকে ব্যাঙ্কশালে ইডির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। তাঁকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
ইডির অভিযোগ, আমানতকারীদের ৫৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল এই চিটফান্ড সংস্থাটির। এর মধ্যে ১১ কোটি ৫ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বাকি ৪৮ কোটি টাকার হিসাব মেলেনি। সংস্থার কর্তা পার্থ চক্রবর্তী ওই টাকা গোপনে অন্য জায়গায় পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ইডির। এদিন আদালতে অভিযুক্তর আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত জামিনের আবেদন করে বলেন, একটি প্রায় দশ বছর আগেকার মামলা। তাঁকে অজস্রবার তলব করে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখন এভাবে গ্রেপ্তার করে জেরা করার কোনও প্রয়োজন নেই।
ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পার্থ চক্রবর্তী তাঁর নিজেরই একটি হোটেল তাঁরই সংস্থা চক্র ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা সরানোর ব্যবস্থা করেন। তারাপীঠে তাঁর একটি হোটেল তিনি চক্র গ্রুপকে বিক্রি করার জন্য দশ কোটি টাকার চুক্তি করেন। আগাম ২২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই চুক্তিতে চক্র গ্রুপই ৬ কোটি টাকা পার্থ চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্টে পাঠায়। আবার ওই হোটেল পার্থ ফের একটি সংস্থাকে লিজে দিয়ে টাকা রোজগার করেন। আবার ২০২১ সালের মে মাসে হরভজন সিং নামে এক ব্যবসায়ীকে হোটেলটি ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিক্রির জন্য চুক্তিও করেন। আবার নিউটাউনের গফফর মোল্লার কাছ থেকে নিজের নামে একটি জমি ১ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন। ওই টাকা দেওয়া হয় চক্র গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে। ইডি নিশ্চিত হয় যে, আমানতকারীদের টাকায় তারাপীঠের হোটেল ও নিউটাউনের জমি কেনাবেচার লেনদেন হয়েছে। একটি মিডিয়া হাউজের মাধ্যমেও ১ কোটি ৬১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪৩ টাকা পার্থর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।
২০১৩ সালে রামপুরহাটে একটি হোটেল তৈরির জন্য একটি ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা নেন পার্থ। সেটি তিনি ফেরতও দেন। এ ছাড়াও রাজারহাটে একটি হোটেল ও একটি বিএড কলেজও আমানতকারীদের টাকা দিয়ে তৈরি হয়। ইডি তদন্ত শুরু করার পর পার্থ নিউটাউনের হোটেলটি তাঁর মেয়েকে দান করেন। চক্র গ্রুপ ২০১০ থেকে ২০১১ ও ২০১৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলে। পার্থর দাবি, তিনি ২০১৩ সালে চক্র গ্রুপ ছেড়ে দেন। কিন্তু ইডির দাবি, এটি পার্থর তদন্তকে ব্যহত করার কায়দা। পার্থ তাঁর এক নিকটাত্মীয়কে সংস্থার ডিরেক্টর করেন, যিনি ইডিকে জানান, তিনি পার্থর কথায় বাধ্য হন কর্তা হতে। অন্য এক ব্যক্তি, যিনি মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পেতেন, তাঁকেও জোর করে পার্থ সংস্থার কর্তা তৈরি করেন। পার্থ তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় সই করতে বাধ্য করতেন। ফলে বকলমে পার্থ চক্রবর্তীই ওই চিটফান্ড সংস্থা চালাতেন বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.