কলকাতায় একটি সাইরেন মেরামত। ছবি: অরিজিৎ সাহা।
অর্ণব আইচ: কোনওটি বাজেনি বহু বছর। আবার কোনওটির তার কেটে গিয়েছে। কোনওটিতে বা পড়তে শুরু করেছে মরচে। মক ড্রিল শুরু হওয়ার আগেই কলকাতার ৯০টি সাইরেন শনাক্ত করে সেগুলি সচল করতে বলল রাজ্যের সিভিল ডিফেন্স। বিভিন্ন জেলাতেও সাইরেনগুলিকে সচল রাখতে বলা হয়েছে। সেইমতো সাইরেনের কী ধরনের শব্দে সতর্ক হয়ে বাড়ির ভিতর, ‘ইনবিল্ট বাঙ্কার’ অথবা জেলার ক্ষেত্রে ‘এল’, ‘ভি’ বা ‘এইচ’ বাঙ্কারের ভিতর লুকিয়ে পড়তে হবে, অথবা সাইরেনের কোন শব্দ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাজানো হয়, তা রাজ্যবাসীকে জানাতে লাগাতার প্রচার চালাবে সিভিল ডিফেন্স। মঙ্গলবার ডিজি (সিভিল ডিফেন্স) জগ মোহন জানান, সুরক্ষার প্রত্যেকটি পদ্ধতি কতটা প্রস্তুত রয়েছে ও সেগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, মক ড্রিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্রের খবর, আগেই রাজ্যের ৫৫ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার ও ৭২০০ ‘আপদ মিত্র’কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মক ড্রিলের অঙ্গ হিসাবেই তাঁদের মাধ্যমে এলাকার বাসিন্দা, যুব, ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা সম্ভব। এনসিসি ও স্কাউট, গাইডদেরও প্রয়োজনে সচেতনতার কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়াও পুরসভা, পুলিশ, দমকলকেও সচেতন করা হচ্ছে। জেলার ক্ষেত্রে সচেতন করা হচ্ছে পঞ্চায়েতগুলিকেও। কাজে লাগানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াকেও।
সিভিল ডিফেন্সের সূত্র জানিয়েছে, সিভিল ডিফেন্সের ভবন, মহাজাতি সদন, হাই কোর্ট, লালবাজার, বেশ কিছু থানা-সহ কলকাতার ৯০টি সরকারি ভবনের ছাদে রয়েছে সাইরেন। সেগুলির মধ্যে সবক’টি যে সচল নয়, এমনও হতে পারে। আবার রাজ্যের ১৭টি ‘সিভিল ডিফেন্স টাউন’-এ যাতে সাইরেন সচল থাকে ও কোনও জায়গায় সাইরেন না থাকলে, তা যেন আপদকালীন অবস্থায় বসানো হয়, সেরকমই বলা হয়েছে। মক ড্রিলের জন্য যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, সেদিকে রাজ্যের সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ রাখছে নজর। বিভিন্ন পদ্ধতিতে সচেতন করার সময় সরকারি সংস্থা ও সাধারণ মানুষকেও জানানো হবে যে, সাইরেনের শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাইরেনের শব্দ পর পর চড়া ও খাদে পৌঁছলে বা ওঠানামা করলে বুঝতে হবে যে, আপদকালীন সময় উপস্থিত। সাধারণত ‘এয়ার রেইড ওয়ার্নিং’ বা মিসাইল, যুদ্ধবিমানের সতর্কতার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে সাইরেন বাজানো হয়। আবার সাইরেনের শব্দ সমান হয়ে বাজলে বুঝতে হবে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
সিভিল ডিফেন্সের আধিকারিকদের মতে, কলকাতার ক্ষেত্রে বাঙ্কার ‘ইনবিল্ট’ বলা যেতে পারে। কারণ, শহরে মেট্রোরেলের পাতালের অংশটিকে বাঙ্কার হিসাবে গ্রাহ্য করা হয়। আবার শহরের বিভিন্ন শপিং মল ও বহুতলে বেসমেন্টের পার্কিং, মহাকরণের উল্টোদিকে মাটির তলায় পার্কিংয়ের জায়গাগুলিকেও বাঙ্কার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তথা ‘সিভিল ডিফেন্স টাউনে’ খালের পাড় কেটে, তাতে টিনের ছাউনি দিয়ে বাঙ্কার তৈরি করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে ইংরেজির ‘এল’, ‘এইচ’ ও ‘ভি’ অক্ষরের মতো তিন ধরনের ট্রেঞ্চ কেটে তৈরি করা যেতে পারে বাঙ্কার। মক ড্রিলের সময় সাইরেন বাজলে যে ওই ‘ইনবিল্ট বাঙ্কার’গুলিতে প্রবেশ করতে হবে, এমন নয়। কিন্তু যুদ্ধকালীন প্রয়োজনে যাতে সবাই সুরক্ষার জন্য বাঙ্কারে প্রবেশ করেন, সেই ব্যাপারে প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও কলকাতা ও জেলার কন্ট্রোল রুম, সংযোগের ব্যবস্থা যাতে সারাক্ষণ চালু থাকে, সেই ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সিভিল ডিফেন্স।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.