সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সর্বস্তরে ভাতা ও বেতন বৃদ্ধি হল। নতুন কাঠামোর কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্টার্ন, পিজিটি, জুনিয়র, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারদের বেতন ও ভাতা গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বাড়ানো হল। ইন্টার্ন, পিজিটি, হাউসস্টাফদের ভাতা বাড়ানো হল ১০ হাজার টাকা। আর রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা বাড়ানো হল। সোমবার আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে তা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তা শুনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন চিকিৎসকরা। প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ একেবারে সরগরম হয়ে উঠল।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে রাজ্যের চিকিৎসকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বহু চিকিৎসক, ইন্টার্ন, হাউসস্টাফরা বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট ডক্টরেট ট্রেনিদের জন্য ভাতা ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হল। সর্বস্তরের রেসিডেন্ট ডাক্তারদের বেতন বাড়ছে ১৫ হাজার টাকা। এতদিন তাঁরা পেতেন মাসে ৮৫ হাজার টাকা, এবার তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ লক্ষ টাকা।
এই ঘোষণার পাশাপাশি চিকিৎসকদের কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ”ন্যূনতম ৮ ঘণ্টা সরকারি পরিষেবা দিন। সেই সময়ে গাফিলতি করবেন না। অন্য কোথাও চলেও যাবেন না। তার পর আপনারা অন্য জায়গায় প্রাইভেটে পরিষেবা দিন, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, সরকারি পরিষেবা দেওয়ার সময় প্লিজ মনোযোগী হোন।”
আসলে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বড় আঘাত নেমে এসেছিল। ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ দীর্ঘ কর্মবিরতি পালন করে।হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সেসময় সরকারি হাসপাতালে রোগী পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে যে তথ্য প্রকাশ্যে আসে তাতে বেআব্রু দশা আরও স্পষ্ট হয়। অভিযোগ ওঠে আন্দোলন চলাকালীন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা নাকি বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিয়েছেন। এসব নিয়ে সরকারের উপরেও চাপ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের ডেকে ইন্টার্ন থেকে সিনিয়র রেসিডেন্ট – সর্বস্তরের চিকিৎসকদের ভাতা ও বেতন বাড়ানোর ঘোষণা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই আরও চাঙ্গা করতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিষয়টি নিয়ে আর জি কর হাসপাতালে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর বক্তব্য, ”রোগী পরিষেবা, পরিকাঠামো সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনও তথ্য দেখতে পেলাম না। যদি দেশের অন্যান্য রাজ্যের বেতন কাঠামো দেখেন, তার তুলনায় পশ্চিমবাংলার ইন্টার্ন বা সিনিয়র রেসিডেন্টদের বেতন কম। এটা আন্দোলনের দাবি ছিল না। কিন্তু সেই প্রাপ্য অধিকার তিনি দিয়েছেন, সেটা ঠিক। কিন্তু রোগী পরিষেবা সংক্রান্ত, সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম সংক্রান্ত, বেড মনিটর ভ্যাকান্সি সিস্টেম সংক্রান্ত, নিম্ন মানের ওযুধ সংক্রান্ত, এই জায়গাগুলো নিয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কোনও বক্তব্য দেখতে পেলাম না।”
আরেক চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলছেন, ”ভারতের অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করলে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের মাইনে কম। সিনিয়র রেসিডেন্টদের মাইনে ৬ বছর ধরে এই প্রথম বাড়ল। এগুলো এমনিই বাড়ার কথা। কিন্তু এই সভায় আলাদা করে ঘোষণা করে কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না। আমি তোমাদের টাকা দিচ্ছি, ফলত তোমরা প্রতিবাদ কোরো না। বা দুর্নীতির কথা তুলো না। এরকম কোনও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হলে ভুল।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.