নব্যেন্দু হাজরা: গঙ্গার নিচের সুড়ঙ্গপথে শুরু হতে চলেছে মেট্রোর লাইন পাতার কাজ। ইউরোপের অস্ট্রিয়া থেকে কলকাতায় পৌঁছে গেছে ইস্পাতের রেল। লাইন বসানোর জন্য এসে গেছে আমেরিকান মেশিন ‘মোবাইল ফ্ল্যাশব্যাট ওয়েল্ডিং’। KMRCL সূত্রে খবর, হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহ অবধি ৭ কিমি লাইন পাতার মতো ইস্পাত এসে পৌঁছে গিয়েছে। আপাতত তা রাখা আছে হাওড়া ময়দান ও সুভাষ সরোবরে মেট্রোর কাস্টিং ইয়ার্ডে। যে সংস্থা এই লাইন পাতার কাজ করবে তাদের প্রতিনিধিরাও এসে গিয়েছে।
হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড অবধি মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ। এই অংশেই গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ বানানো হয়েছে। এবার এই পথে শুরু হতে চলেছে মেট্রোর লাইন পাতার কাজ। তার জন্য অস্ট্রিয়া থেকে আনা হয়েছে ১৭১০ মেট্রিক টন ইস্পাত। ১৮ মিটার করে লম্বা এক-একটি রেলের খণ্ড আনা হয়েছে। এগুলিকেই জোড়া হবে। KMRCL-এর জিএম ইলেকট্রিক্যাল নরেশচন্দ্র কারমালি জানিয়েছেন, “মেট্রো লাইনে কোনও জয়েন্ট থাকে না। তাই প্রতিটি খণ্ড বসিয়ে বিশেষ যন্ত্র মোবাইল ফ্ল্যাশব্যাট ওয়েল্ডিং দিয়ে জোড়া হবে। তারপর বিভিন্ন তাপমাত্রায় তা পরীক্ষা করা হবে।” পণ্যবাহী ট্রেন বা মেল এক্সপ্রেস ট্রেন যখন চলাচল করে, তখন রেললাইনের ওপরে তার ভার অনেক বেশি। সেই তুলনায় মেট্রোর ভার অনেকটা কম হয়। কিন্তু মেট্রো পরিষেবা যেহেতু ঘনঘন হয়, তাই রেলের ওপরে ঘর্ষণ এবং তাপ এতটাই উৎপন্ন হয় তাই এই কাজ অনেক বেশি নিখুঁত ও সচেতনতার সাথে করতে হয়।
KMRCL-এর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, মেট্রো লাইন হয় সুড়ঙ্গ নয়, মাটির অনেক উপরে হয়। ফলে এখানে লাইন বদলানো খুব একটা সহজ ব্যপার নয়। তাই কমপক্ষে ১০০ বছর ধরে পরিষেবা দিতে হবে এমনটা ভেবেই এই রেল বা ইস্পাত নিয়ে আসা হয়েছে। সূত্রের খবর, ভিয়েনার নদী বন্দর থেকে জাহাজে কলকাতা বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে এই ইস্পাত। ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ-সহ নানা উপকরণ দিয়ে এই ইস্পাত বানানো হয়েছে। সাধারণ লাইনের চেয়ে এই লাইনের পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা অনেকটা বেশি। বিশেষ প্রযুক্তিতে বানানো এই ইস্পাত কয়েক মিনিট অন্তর ট্রেন চলাচলের পরেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাই দাম বেশি হলেও এটাই বাছাই করেছে। যেহেতু অস্ট্রিয়া রেললাইন তৈরিতে দক্ষ তাই সেখান থেকেই এই ইস্পাত আনা হয়েছে। ভারতে একটি ইস্পাত সংস্থা এখন যদিও এই রেললাইন বানানোর কাজ শুরু করেছে।
আগামী সপ্তাহ থেকেই সুড়ঙ্গ মধ্যে এই লাইন পাতার কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই তৈরি করা হচ্ছে একটি মোটা কংক্রিটের স্তর। সেই কংক্রিটের ওপর বসবে অস্ট্রিয়া থেকে আনা রেললাইন। লক্ষ্য ২০২১ সালে এই কাজ শেষ করা। তবে এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ অবধি সুড়ঙ্গ কাজ শেষ না হলে দু’প্রান্ত থেকে লাইন পাতার কাজে একটা সমস্যা থেকে গেল। তাই একটু বেশি সময় লাগবে এই কাজ শেষ করতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.