গৌতম ব্রহ্ম: দাম মাত্র ২০ টাকা। সংকটজনক কোভিড রোগীকে বাঁচাতে এই সস্তার ডেক্সামেথাজোনই ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠেছে। সাইটোকাইন ঝড় থামিয়ে এই ম্যাজিক ড্রাগই যমের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছে ‘ক্রিটিক্যাল’ কোভিড রোগীকে। এমনটাই দাবি করেছেন ব্রিটেনের একদল গবেষক। তাঁদের দাবি, ওষুধটি মৃত্যুর হার এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি এই ট্রায়াল চালান। প্রায় ছ’হাজার রোগীকে নিয়ে গবেষণা চলে। ২১০৪ জনের উপর ডেক্সামেথাজোন প্রয়োগ হয়। ৪৩২১ জন রোগী পান ‘স্টেরয়েডহীন’ প্রথাগত চিকিৎসা। ট্যাবলেট ও ইঞ্জেকশন, দুই ফরম্যাটেই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে। গবেষকদলের দাবি, মেশিনের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া রোগীর মৃত্যুর হার ৩৫ শতাংশ এবং ‘সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন’ পাওয়া রোগীর মৃত্যুর হার ২০ শতাংশ কমেছে।
এই গবেষকদলটিই কোভিডে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কাজ না করার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছিল। জানা গিয়েছে, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ১১ হাজারের বেশি রোগীর উপর পরীক্ষা চলেছে। একটি অংশের উপর প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বাকিদের ক্ষেত্রে একটি করে বাড়তি ওষুধ দেওয়া হয়। কখনও লোপিনাভির-রিটোনাভিরের মতো অ্যান্টিভাইরাল, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক। কখনও আবার ডেক্সামেথাজোনের মতো স্টেরয়েড। টোসিলিজুমাবের মতো দামী ‘অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি’ ওষুধও পেয়েছেন কিছু রোগী। বাদ যায়নি প্লাজমা থেরাপিও। গবেষকদলের অন্যতম প্রধান পিটার হর্বি জানিয়েছেন, ‘‘ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কেভিডের ক্রিটিক্যাল ম্যানেজমেন্টে বিশ্বজুড়েই এই সস্তার সহজলভ্য ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত।”
টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হোক বা বেলেঘাটা আইডি, সর্বত্রই সংকটজনক কোভিড রোগীর উপর স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়। আইডি’র কোভিড যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি তথা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগিরাজ রায়ের পর্যবেক্ষণ, সংক্রমণের প্রথম পর্বে স্টেরয়েড দিলে কাজ হবে না। দেরিতে দিলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। ডোজ এবং টাইমিং খুব জরুরি। আসলে সংক্রমণ শিখর ছোঁয়ার লগ্নেই দিতে হবে ডেক্সামেথাজোন।
ক্রিটিক্যাল কেয়ারে স্টেরয়েডর ব্যবহার অবশ্য হামেশাই হয়। যে কোনও সংকটজনক শ্বাসকষ্টের রোগীকেই ডেকাড্রন, ডেরিফাইলিন দেওয়া হয়। ডেকাড্রনই আসলে ডেক্সামিথাজোন। ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, “আমাদের রাজ্যেও কোভিড রোগীর উপর এই ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে। ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে এই স্টেরয়েড বেশ কার্যকর। ‘ইমিউনো সাপ্রেশন’ হিসাবেও ভাল। একই বক্তব্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের। জানালেন, কোভিডের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মৃত্যু ডেকে আনে সাইটোকাইন স্টর্ম। ইতালিতে অটোপসির রিপোর্টও তাই বলেছিল। সুতরাং স্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতেই পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.