স্টাফ রিপোর্টার: কালীপুজোর রাতে কলকাতার ছবিটা অনেকটাই বদলে গেল। দীপাবলির রাতের প্রেক্ষিতে অন্যান্যবারের তুলনায় কমল দূষণের মাত্রা। বহু জায়গায় কখনওই তা সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করেনি। ছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য প্রশাসন-কলকাতা পুলিশের নজরদারি। কিন্তু সম্ভব ছিল না, শহরের প্রতিটি বাড়িতে, ছাদে বা কোনায় কোনায় প্রত্যেকের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ। এটা সম্ভবও নয়। ফলে রাত এগারোটার পর দু’-একটি জায়গায় ছাড়িয়েছে বায়ুদূষণ সূচক। তবু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীপাবলির নিশিতে গতবারের থেকে কিছুটা কম হয়েছে দূষণ। আপাত রিপোর্ট ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এমনটাই অনুভূতি ও অভিমতের কথা জানিয়েছেন।
[বাজি পুড়িয়ে বাক্স ফেরত দিলেই মিলবে টাকা!]
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, গতবছর ১৯ অক্টোবর, দীপাবলির রাতে রবীন্দ্রভারতী এলাকায় ওজোনের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৩৮৪, এবার তা ৯২। গতবার রাত ১২টায় নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছুঁয়ে ছিল ২১৬৪! এবার সেই মান সর্বোচ্চ ১৫৬। এই রিপোর্টই আতসবাজি জব্দে বাঙালি মানসের আশার আলো দেখিয়েছে। যদিও একদিনের কিছুটা সময়ের রিপোর্টে সামগ্রিক চেহারা তুলে ধরা কঠিন বলেই মন্তব্য তাঁদের। সন্ধ্যা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে গতবারের তুলনায় অনেক কম। গতবার অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৬১টি, এবার ৯৮টি। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও মনে করছেন, এবার ফল গতবারের তুলনায় ভাল। তাঁর বক্তব্য, “আপাতভাবে মনে হয়েছে, উন্নতি হয়েছে। সব রিপোর্ট হাতে পেলেই অবশ্য গোটা চিত্রটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু এটা সত্যি, গতবারের ভয়াবহ অবস্থা নেই।” শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে গতবারের সঙ্গে এবারের ১৪ দিনের তুলনামূলক রিপোর্ট হাতে নিয়েই তিনি আদালতের দ্বাস্থ হবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পদক্ষেপ ও মানুষের সচেতনতাবৃদ্ধি এক্ষেত্রে বড় কারণ। বাজি পোড়ানোয় সুপ্রিম কোর্টের রায় ও নজরদারি অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে বাংলার জনমানসে। বায়ুদূষণ রুখতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আতশবাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। বাজি পোড়ানোর সময়সীমা ছিল রাত আটটা থেকে রাত দশটা। অথচ, রবীন্দ্রভারতী ও ভিক্টোরিয়ায় দুই ক্ষেত্রেই মঙ্গলবার রাত এগারোটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত বায়ুদূষণ সূচক ৫০০ হয়েছে। স্বাস্থ্যের নিরিখে এটি খুবই খারাপ। যদিও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে ৩১ অক্টোবর থেকে ১৪ দিন ধরে শহরের নানা কেন্দ্রে দূষণকারক বিভিন্ন কণার তথ্য নেওয়ার কাজ করছে। এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বেহালা চৌরাস্তা, বৈষ্ণবঘাটা, বেলেঘাটা, ডানলপ ব্রিজ, মৌলালি, পরিবেশ ভবন রয়েছে।
[৩ দিনের ব্যবধানে ফের ভেঙে পড়ল ডানলপ ব্রিজের হাইটবার]
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রর বক্তব্য, “মেঘলা আকাশ ও বাতাস না চলায় সঠিক চিত্র ফুটে ওঠার সম্ভাবনা কম। পর্ষদের পক্ষ থেকে সব রিপোর্ট জড়ো করেই তথ্য জানানো হয়। অন্য যে কোনও সংস্থার রিপোর্ট সঠিক উপায়ে তৈরি করা উচিত। পর্ষদ ২১টি যন্ত্রের সাহায্যে সূচক মাপছে।” মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলিতে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বাতাস তেমনভাবে বয়ে যায়নি। এই ‘স্ট্যাগনান্ট উইন্ড’-এর ফলে স্থানীয় স্তরে বাতাস আটকে থাকে। তাই কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় দূষণের সূচক স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। এই বিষয়কেও স্বস্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মোটামুটিভাবে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, ওজোন ছাড়াও ২.৫ মাইক্রোমিটারের নিচে ও ১০ মাইক্রনের নিচে ধূলিকণার পরিমাণ দেখেই সূচক তৈরি করা হয়। ২.৫ মাইক্রোমিটারের নিচে বায়ুকণা ধীরে ধীরে ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে। পিএম ১০ বা ১০ মাইক্রোমিটারের নিচের কণার মাত্রাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর পরিমাণও উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের মত, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের রোগীদের ক্ষেত্রে দূষণ মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। চোখের পাশাপাশি অ্যালার্জি বৃদ্ধিরও বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে এই দূষণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.