ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: গলব্লাডার স্টোন নিয়ে হাওড়া (Howrah) শালকিয়ার নার্সিং হোমে ভরতি হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। অপারেশন শেষে আর জ্ঞান ফেরেনি রোগীর। গোটা ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দ্বারস্থ হয় রোগীর পরিবার। তদন্ত করতে নেমে মাথায় হাত স্বাস্থ্য কমিশনের। শালকিয়ার বাবুডাঙা এলাকার ‘স্পেশ্যালিষ্ট কর্নার’ নামে ওই নার্সিংহোমের মালিক ডা. মদনমোহন ধারার দাবি, অভিযুক্ত ডাক্তার তাঁদেরও অপারেশন থিয়েটারের ভাড়া না দিয়েই পালিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রাজেন্দর কাছরু আদৌ সার্জারি জানতেন না। সাধারণ এমবিবিএস পাশ ওই চিকিৎসক। সমস্ত রোগীদের বারণ করা হত ওঁকে দিয়ে অপারেশন যেন না করান। কিন্তু যেহেতু ডাক্তার সামান্য টাকার বিনিময়ে অপারেশন করতেন, তাই রোগীরা যেতেন তাঁর কাছে।”
এদিকে নার্সিংহোম মালিকের এহেন দায়সারা জবাবে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় বিস্ময়, “নার্সিংহোমের মালিক বলছেন ওঁকে না জানিয়েই নাকি অস্ত্রোপচার চলত। একজন নার্সিংহোম মালিক যিনি কিনা নিজেও চিকিৎসক, তাঁর নার্সিংহোমে কীভাবে না জানিয়ে অপারেশন হয়? এমন গাফিলতিতে একজন রোগী মারাও গেল! গোটা ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। রোগীর জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলছে।” কমিশনের প্রশ্ন, “একজন চিকিৎসক যিনি অপারেশন করছেন, তাঁর যোগ্যতা আছে কি না তা একবার দেখে নেবে না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ?”
হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতদিন না তদন্ত শেষ হচ্ছে নতুন রোগী ভরতি নিতে পারবে না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তদন্তে যদি রোগীর মৃত্যুতে নার্সিংহোমের গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায় শোনার পর নার্সিংহোম মালিক সত্তরোর্ধ্ব ডা. এমএন ধারা জানিয়েছেন, “ওই চিকিৎসককে বারবার বলেছিলাম এখানে অপারেশন করো না। নোটিসও দিয়েছিলাম। শোনেনি।” অভিযোগ, অপারেশনের আগে রোগীর প্রি অ্যানেস্থেশিয়া চেকআপ করতেন না ওই চিকিৎসক। অনেক সময় কম টাকায় কাজ সারার জন্য আলাদা করে অ্যানাস্থেসিস্টও নিতেন না। নিজেই সব কাজ করতেন। নার্সিংহোমের মালিকের আফশোস, “যে রোগী মারা গিয়েছেন, তিনি জিটি রোডে থাকতেন। আমায় যদি একবার বলতেন এই ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাবেন তখনই বারণ করতাম। পড়াশোনা না জেনে অপারেশন করা যায়?”
সকাল সাতটায় অপারেশন করে বারোটার মধ্যে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল রোগীকে। নার্সিংহোম মালিকের ধারণা, এত তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়েই গন্ডগোল করেছেন অভিযুক্ত। বুড়ো বয়সে একজন অযোগ্য চিকিৎসকের জন্য তাঁকে বিপদে পড়তে হল বলে আক্ষেপ নার্সিংহোম মালিকের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.